গ্রিড বিপর্যয়

পিজিসিবির দুই প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২২, ০৮:৪১ পিএম
পিজিসিবির দুই প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত

গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলায় পিজিসিবির দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত করা কর্মকর্তারা হলেন—পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সিস্টেম প্রোটেকশন অ্যান্ড মিটারিং ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আল্লামা হাসান বখতিয়ার এবং সহকারী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

রোববার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে চিঠি ইস্যু করা হয় বলে জানিয়েছে পিজিসিবির মুখপাত্র বদরুদ্দোজা সুমন। তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদনও বিকেলে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদন যাচাই বাছাই করেই এই সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর একযোগে দেশের একটি বড় অংশে বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। ওইদিন বেলা ২টা ৪ মিনিটে গ্রিডে বিপর্যয় ঘটলে পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ বন্ধ হয়ে যায়। 

এতে দেশের অর্ধেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ঘটনার পর পরই পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক (পিঅ্যান্ডডি) ইয়াকুব এলাহীর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় গ্রিড বিপর্যয় ঘটেছিল। 

বিপর্যয় শুরুর মুহূর্তে সঞ্চালন, বিতরণ ও ন্যাশনাল ডেসপাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) কর্মকর্তাদের গাফিলতি খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

তাদের অনেকেই জানান, গ্রিড বিপর্যয়ের সময় অর্থাৎ ৪ অক্টোবর দুপুরে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম ছিল। এ সময় লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে চাহিদা কমানোর প্রয়োজন ছিল। ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকোকে সেই নির্দেশনা দিয়েছিল এনএলডিসি। কিন্তু সেই নির্দেশনা পালিত হয়নি।

এ সময় চাহিদা মেটাতে পশ্চিমাঞ্চল থেকে এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট সিরাজগঞ্জ-আশুগঞ্জ গ্রিড দিয়ে পূর্বাঞ্চলে আনা হচ্ছিল। পূর্বাঞ্চলের গ্রিডে সংযুক্ত ঘোড়াশাল সাবস্টেশনের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ১০০০ মেগাওয়াট। ঘটনার সময় সক্ষমতার চেয়ে বেশি সরবরাহের কারণে সাব-স্টেশনটি বিকল হয়ে পড়ে।

তখনই চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত একটি স্টিল কারখানা ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেওয়া শুরু করে। অর্থাৎ একই সময়ে উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে একটি বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হয়, যা জাতীয় গ্রিডে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করে। এরপর পর্যায়ক্রমে পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হতে থাকে। এতেই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে।

গত ৪ অক্টোবর দেশের একটি বড় অংশে বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। শনিবার (১৫ অক্টোবর) এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছিলেন, গ্রিড বিপর্যয়ের পেছনে কারিগরি নয়, মূলত ব্যবস্থাপনা ত্রুটি ছিল। 

আর এজন্য দায়ী সঞ্চালন কোম্পানির কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে তাদের চাকরিচ্যুত করার হুঁশিয়ারি দেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

ব্ল্যাকআউটের ওই ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও আশপাশের এলাকাগুলো ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।

টিএইচ