অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের হার বেড়ে চলছে। তাদের মাধ্যমে এইডস সংক্রমণের হার বেশি। যৌনকর্মী, সমকামী, মাদকাসক্তদের মধ্যেও এই হার বাড়ছে। নতুন ৯৭৪ জন এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। তারমধ্যে ১৮ শতাংশ অভিবাসী। এইডস মোকাবেলায় প্রবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় নিতে হবে। একই সাথে বিদেশ ফেরত সবাইকে এইচআইভি শনাক্তকরণ পরীক্ষায় জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে কমিউনিটি ফোরাম অব বাংলাদেশ আয়োজিত এইচআইভি আক্রান্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী শীর্ষক মিডিয়া অ্যাডভোকেসি গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর জাহিদ আনোয়ার বলেন, দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়ে এইডস আক্রান্ত হয়ে কত সংখ্যক মানুষ মারা গেছে সেই তথ্যটা আমাদের কাছে আছে। কিন্তু আক্রান্তের যথাযথ তালিকা আমাদের কাছে নেই। কারণ, কেউ এইডস আক্রান্ত হলে তথ্য গোপন করে, আমাদের কাছেও বলতে চায় না।
তিনি বলেন, কেউ যদি আক্রান্ত হয়ে দেশে আসে তাহলে আমরা তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। কেউ দেশে এলে আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি, তাদের জন্য আমাদের একটা বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স আছে।
ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মো. আবু তাহের বলেন, এইডস আক্রান্তদের মধ্যে মাদকসেবীদের সংখ্যা বিশাল। আমাদের দেশে মাদকের পেছনে প্রতি বছর যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়, এক-দুইটা পদ্মা সেতু আমরা করে ফেলতে পারব। এই টাকাটা যদি সেভ করতে পারি তাহলে কিন্তু আমাদের বোনদের দেশের বাইরে গিয়ে বুয়ার কাজও করতে হয় না।
তিনি বলেন, এইডস আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো আমাদের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তাদের প্রতিও আমাদের অনেক অবহেলা রয়েছে। অনেক সময় তারা অসুস্থ হলে আমরা তাদের হাসপাতালে ঢুকতেও দেই না। আর যদি এইডস আক্রান্ত হয়ে আসে তাহলে তো কোনো কথাই নেই। এসব বিষয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে।
ইউএনএইডসের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সায়মা খান বলেন, নারী মাইগ্রেন্ট (অভিবাসী) কর্মীরা কাজ করতে গিয়ে যেসব সমস্যা পার করে আসেন তা খুবই ভয়াবহ। তাদের মধ্যে এইচআইভি ভাইরাসের আক্রান্ত বেড়ে চলেছে। যৌনকর্মী, সমকামী, মাদকাসক্তদের মধ্যেও এইডস আক্রান্ত বাড়ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ রয়েছে। সেক্স ওয়ার্কারদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, নতুন করে ৯৭৪ জনের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে ১৮ শতাংশ হলো মাইগ্রন্ট পিপল।
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, এইচআইভি এইডস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে গণমাধ্যমগুলো এইডস নিয়ে সঠিক তথ্য পাচ্ছে না। অনেক সময় কর্তৃপক্ষও এসব নিয়ে তথ্য গোপন করে, যে কারণে জটিলতা তৈরি হয়। তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে মাইগ্রেন্ট পপুলেশনের মাধ্যমে এইডস সংক্রমণের হার বেশি। কিন্তু যারা আমাদের জন্য রেমিট্যান্স আয় করেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সময় তাদের নিরাপত্তার কথা ভাবা হয় না। প্রবাসী এসব কর্মীদের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কমিউনিটি ফোরাম অব বাংলাদেশের চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম বলেন, বিদেশ গিয়ে যে মারা যাচ্ছে সে ভাতা পায়। কিন্তু যে অসুস্থ হয়ে ফিরে আসছে তাদের জন্য আমরা কিছু করতে পারছি না। বরং তাদের ওপর দোষ চাপানো হয়। যাদের অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফেরত পাঠানো হয় তারা জানেও না তাদের করণীয় কী। এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে আরও ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, অন্যান্য দেশগুলোতে মাইগ্রেন্ট পপুলেশনের সব দায়িত্ব তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নেয়। কিন্তু আমাদের দেশের নিয়োগকারীরা কর্মী পাঠিয়েই দায়মুক্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাদেরও জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা যায় কি না ভাবতে হবে। আমরা বাংলাদেশকে এইচআইভি মুক্ত করতে চাই।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, ৩০ শতাংশ সাধারণ জনগোষ্ঠী এইচআইভি এইডের ঝুঁকিতে আছেন, যারা আগে এইডস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ১২ লাখ ৪১ হাজার পরীক্ষা করা হয়েছে, এর মধ্যে ৯ লাখ ৫৫ হাজারই বিদেশগামী। তারা বলেন, দেশ থেকে যারা যাচ্ছেন, তারা ঠিকই পরীক্ষা করে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা দেশে আসছেন তাদের কোনো পরীক্ষা করা হচ্ছে না, এমনকি বিমানবন্দরে পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। কারণ, আমাদের এমন কোনো পলিসি নেই। এর ফলে এইডস আক্রান্ত ১৮ শতাংশ মানুষ দেশে আসছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন কর্মকর্তা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।
ইএফ