জরায়ুমুখের ক্যান্সার রোধে টিকায় গুরুত্বারোপ

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০৬:৫৭ পিএম
জরায়ুমুখের ক্যান্সার রোধে টিকায় গুরুত্বারোপ

জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে ৯ থকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের ২ ডোজ টিকা দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতন দিবস ও সচেতনতা মাস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারা এ কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব এবং এর প্রতিরোধ করাও সম্ভব। প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য এইচপিভি নামের ক্ষতিকর ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকাদান, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা এবং এই ক্যান্সারের ঝুঁকি ও প্রতিরোধ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার, এখনও পর্যন্ত এ রোগের প্রতিরোধে কোনও কার্যকর জাতীয় কর্মসূচি নেওয়া হয়নি।

তারা বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয়ের জন্য ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ে নারীদের উদবুদ্ধ করা এবং স্ক্রিনিংয়ের সংগঠিত ও সমাজভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া জরুরি।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ক্যান্সার স্ক্রিনিং জাতীয় কর্মসূচি নাই বাংলাদেশে । আমি পদে থাকা অবস্থায় যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু নীতি নির্ধারকদের বোঝাতে সক্ষম হইতে পারিনি।

ডা. রাসকিন বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও তিন ধরনের ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম করা সম্ভব। ব্রেস্ট, সারভাইবাল ও ওরাল ক্যান্সার। আমাদের দেশে ওরাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং শুরু হয়নি এখনও।

তিনি বলেন, আমি জোর দিয়ে বলছি জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে যে স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চলছে তা অসংগঠিত, অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ। আগামী একশ বছরেও ২০ শতাংশ মানুষকে আওতাধীন আনা সম্ভব হবে না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ও সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের কর্মক্ষেত্র ও আন্তরিকতায় অনেক সমস্যা আছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক ভালো। প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থাও আছে।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য নীতিমালা এখনো অসম্পূর্ণ। আমরা কারও বুদ্ধি নিতে চাই না। আমরা যা বুঝি তাই। এভাবে চললে আসলে কোনো কার্যকরি নীতিমালা তৈরি সম্ভব না।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশে আট হাজারের বেশি নারী জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, মারা যায় প্রায় পাঁচ হাজার। নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের পরেই এর স্থান। এটা দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসির হিসাব। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবন্ধন প্রতিবেদন অনুযায়ী নারীদের দ্বিতীয় প্রধান ক্যান্সার এটি।

সরকারিভাবে জাতীয় কর্মসূচির জন্য জনমত গঠন ও নিজেদের সাধ্যমত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ৬ষ্ঠ বারের মতো জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উদযাপন ও মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মার্চ ফর মাদার নামের মোর্চা। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে থেকে ‘জননীর জন্য পদযাত্রা’, তথ্যসমৃদ্ধ বাংলা লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

এবি