বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত করল বিইআরসি

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩, ০৪:২৬ পিএম
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত করল বিইআরসি

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চলমান প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক। নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় কমিশনের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।

তিনি বলেছেন, আপাতত দাম বাড়ানোর চলমান প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, রোববার (১৫ জানুয়ারি) কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থগিতের কোন সময়সীমা থাকছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে এড়িয়ে যান তিনি। তিনি বলেন, এখনই কোন মন্তব্য করা সম্ভব না।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, সরকার তো নির্বাহী আদেশে একটা দাম ঘোষণা করেছে। এখন যদি আমরাও ঘোষণা করি তাহলে বিষয়টা কেমন হবে! তাই আপাতত আমরা দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছি। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

এর আগে গত ৮ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আইনি প্রক্রিয়া শুনানি গ্রহণ করে। বিইআরসির বিধানে আছে ৯০ দিনের মধ্যে শুনানির ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। কিন্তু শুনানির ঠিক চার দিনের মাথায় (১২ জানুয়ারি) নির্বাহী আদেশে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।

বিইআরসি প্রতিষ্ঠার পর নির্বাহী আদেশে এভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নজির এটাই প্রথম। বিইআরসির প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকাকালীন নির্বাহী আদেশ দেওয়ায় বিশেষজ্ঞরা বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন।

বিইআরসি গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রতি ইউনিট ৫.১৭ টাকা থেকে ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়ে ৬.২০ টাকা নির্ধারণ করে। তারপরেই বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন জমা দেয়। কোম্পানিগুলো আবেদন জমা দিলে চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের মতামত নেয় বিইআরসি।

ওই চিঠিতে বিইআরসিকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম চূড়ান্ত করতে বলা হয়। যার প্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারি শুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। আইন অনুযায়ী শুনানির পর সম্পূরক প্রস্তাব (যদি থাকে) দেওয়ার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। 

অর্থাৎ দাম বৃদ্ধির আদেশ থেকে মাত্র ৪ দিন পিছিয়ে ছিল বিইআরসি। প্রক্রিয়া যখন প্রায় শেষ দিকে, তখন কেনো নির্বাহী আদেশ দিতে হলো সেটাই এখন অনেকের কাছে বড় প্রশ্ন।

এমন ঘটনায় গণশুনানিতে অংশ নেওয়া ভোক্তাদের প্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, সবে মাত্র বিইআরসি হাঁটি হাঁটি পা পা করে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দিকে যাচ্ছে। 

একদিকে যেমন ভোক্তাদের স্বার্থ দেখা হতো, একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর কিছুটা হলেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতো। এখন সেই জায়গাটি আর থাকল না। কোম্পানির বোর্ড সভায় বসে সচিব যে সিদ্ধান্ত নেবে, মন্ত্রণালয় বসে তা অনুমোদন দিয়ে যাবেন। কারও কিছু বলার থাকবে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ নির্বাহী আদেশে গড়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘোষিত নতুন দর চলতি জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে। আবাসিকের লাইফলাইন গ্রাহকের (৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী) ইউনিট প্রতি ১৯ পয়সা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা, প্রথমধাপে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৪০ টাকা করা হয়েছে।

এদিকে, কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ পাম্পের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা। এ ক্ষেত্রেও ডিমান্ড চার্জ ৩৫ টাকা করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৩০ টাকা। এছাড়া আগে মাসে ডিমান্ড চার্জ ৩০ টাকা ছিল, এখন সেখানে বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা।

টিএইচ