রাষ্ট্রীয় প্রকল্প থেকে অর্থ আহরণ করছে একটি শ্রেণি : ড. দেবপ্রিয়

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩, ১২:৫৮ এএম
রাষ্ট্রীয় প্রকল্প থেকে অর্থ আহরণ করছে একটি শ্রেণি : ড. দেবপ্রিয়

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব বাংলাদেশের পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটেছে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে। সে সময়েও কিন্তু পরিত্যক্ত সম্পত্তি লুণ্ঠনের মধ্যে দিয়ে এই কাজের সূত্রপাত ঘটেছিল। পরবর্তী সময়ে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট নানা প্রকল্প যা আদৌ দরকার ছিল না, সেসব প্রকল্পকে ঘিরে পুঁজি গঠনের চেষ্টা করা হয়েছে। আশির দশকে শিল্পব্যাংককে শিল্পায়নের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা ফিরে আসেনি। সেটাই পরবর্তী সময়ে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। আর বর্তমানে রাষ্ট্রীয় প্রকল্প থেকে এখন অর্থ আহরণ করছে একশ্রেণি। এ ধরনের অর্থনীতির প্রক্রিয়া চলমান আছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত ‘বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলন-২০২৩’-এর দ্বিতীয় দিনে প্যানেল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।


‘রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষমতার সমীকরণ : বাংলাদেশে পুঁজিবাদের বিকাশ’ শীর্ষক এই প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান। প্যানেল আলোচনায় আরো অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান প্রমুখ। 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্যানেল আলোচনায় আরো বলেন, আগে দেখতাম বাজার পরিস্থিতি ব্যর্থ হয়েছে, ব্যাংক ব্যর্থ হয়েছে, এখন দেখছি উচ্চবর্গীয় ব্যক্তিরা ব্যর্থ হচ্ছে এবং এই সিস্টেমটাকে চালু রাখার পর একটা কর্তৃত্ববাদী সিস্টেম চলে আসে। এই কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা কি টেকসই হবে? এটার ক্রন্তিকাল ইতিমধ্যে চলে এসেছে। বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতা না এলে দেড় দশকের যে উন্নয়ন তাকে যেমন টেকসই করা যাবে না, তেমনি ২০৪১ সালে আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ করা কষ্ট হবে। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য কোনো রাজনৈতিক শক্তি আসবে কি না, জানি না। তবে অন্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, রাজনৈতিক শক্তির যে ঘাটতিটা থাকে সামাজিক শক্তি সেই ঘাটতি পূরণ করে। গত ১০-১৫ বছরে দেশে এক ধরনের সামাজিক শক্তি তৈরি হয়েছে। তারা রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যখন আমাদের ছেলেমেয়েরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করে, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন করে এগুলো তারই চিহ্ন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে সংস্কারগুলো আমাদের করার কথা সেগুলো আইএমএফ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এই কথাগুলো আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলাম। তবে নানা কারণে তা করা হয়নি।

অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জতীয় সংসদে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি। তারাই মূলত এখন সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে যখন জাতীয় সংসদ গঠন করা হয় তখনো ব্যবসায়ী ছিল কিন্তু তা শতাংশের হারে ২৪ থেকে ২৭ শতাংশ। সেখানে অন্যান্য পেশাজীবীও ছিল, কিন্তু দিন দিন সংসদে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ নবম জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল ৫৬ শতাংশ। এর ফলে তারা নিজেদের ব্যাবসায়িক স্বার্থে নানা ধরনের আইন পাশ করে এবং নানাভাবে সরকারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করে। তাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরো বাড়ে।

অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, দিন দিন ব্যবসায়ীরা সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে চাপ প্রয়োগ করে থাকে। সেটা অনেক সময় জনকল্যাণমূলক নাও হতে পারে। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অর্থনীতিবিদ মির্জা এম হাসান বলেন, বাংলাদেশে পুঁজিবাদ ও ব্যবসা নানাভাবে বিকাশ লাভ করেছে। কখনো সেনা শাসনের আমলে, কখনো রাজনৈতিক সরকারের আমলে। একটা বিষয় এখানে মিল রয়েছে সেটা হলো ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ঢুকেছে এবং তাদের ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসাও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রথমে দলে অর্থায়ন ও নানাবিধ সহযোগিতার মাধ্যমে প্রবেশ করে। পরে তারাই সংসদ সদস্য হন।