সারাদেশে কালবৈশাখীতে প্রাণ গেল ৮ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ০৯:৩০ পিএম
সারাদেশে কালবৈশাখীতে প্রাণ গেল ৮ জনের

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দাবদাহ বয়ে যাচ্ছিল। এই তাপপ্রবাহের মধ্যেই বৃস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে স্বস্তির বৃষ্টির দেখা পেয়েছে দেশবাসী। সঙ্গে ছিল কালবৈশাখী ঝড়। ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুজন, সাতক্ষীরায় দুজন, যশোর, মেহেরপুর, রাজবাড়ী ও ঝিনাইদহে একজন করে মৃত্যু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে এ খবর জানা গেছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় আমবাগানে কাজ করার সময় বজ্রপাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। আজ দুপুর সোয়া ১টায় শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের মাস্তান বাজার এলাকার এই ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের মো. শাহিন ও একই ইউনিয়নের শরৎনগর গ্রামের মো. অসিম। আহতরা হলেন শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের লাছমানপুর গ্রামের মো. নয়ন আলী ও গোপালনগর গ্রামের মো. সারোয়ার হোসেন। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হায়াত বলেন, ‘আমবাগানে বজ্রপাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আমরা ঘটনাটির খোঁজ রাখছি। নিহত ও আহতদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।’

রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বজ্রপাতে শহিদুল ইসলাম (৩২) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আজ বিকেলে উপজেলার হামিদ মৃধার হাট এলাকায় জমিতে কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার চর দৌলতদিয়া খালেক মৃধার পাড়ার জামাল মৃধার ছেলে। গোয়ালন্দ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

ঝিনাইদহ:  ঝিনাইদহ সদর উপজেলা মধুহাটী ইউনিয়নের কুবিরখালী গ্রামে বজ্রপাতে সুজন হোসেন (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সুজন হোসেন ওই গ্রামের রমিজ উদ্দীনের ছেলে। এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, বিকেলে কৃষি কাজ করতে মাঠে যায় সুজন হোসেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়। এসময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

যশোর: যশোরের শার্শায় মাঠ থেকে ধান তোলার সময় বজ্রপাতে কামরুল ইসলাম (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার পাঁচ কায়বা গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। কামরুল ইসলাম ওই গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে কামরুল ইসলাম জমি থেকে ধান তোলার জন্য মাঠে যান। এসময় বৃষ্টি শুরু হলে হঠাৎ বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কলারোয়া ও সদর উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন কলারোয়া উপজেলার পাঁচরকি গ্রামের কামরুল ইসলাম (৩৬) ও সদর উপজেলার বিহারীনগর গ্রামের আব্দুল্লাহ মোল্লা (৩৪)।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান জানান, বিকেলে আব্দুল্লাহ মাঠে ধান কাটছিলেন। হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এ সময় তিনি উঠানে পৌঁছানো মাত্রই বাজ পড়লে (বজ্রপাত হলে) ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আব্দুল্লাহ সদর উপজেলার বিহারীনগর গ্রামের গ্রামের মৃত অহেদ বকসের ছেলে। কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাড়ির পাশের বিল থেকে বোরো ধান ওঠাচ্ছিলেন কামরুল ইসলাম। এ সময় বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। বজ্রপাতে কামরুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই মারা যান।

মেহেরপুর : মেহেরপুরের মুজিবনগরে বজ্রাপাতে শাহাবুদ্দিন (৪০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের বিদ্যাধরপুর বাউন দা মাঠে এ ঘটনা ঘটে। শাহাবুদ্দিন দারিয়াপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার মৃত আলীমুদ্দীনের ছেলে। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান, নিজ জমিতে কাজ করার সময় হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এ সময় বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই শাহাবুদ্দিনের মৃত্যু হয়।

রাজধানীতে ৭৪ কিলোমিটার বেগে ঝড়: ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া নিয়ে ঢাকায় আঘাত হানল বছরের প্রথম কালবৈশাখী। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রায় ১২ মিনিট ধরে চলা ওই ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিও ঝরেছে। সারা দিন দাবদাহের পর ওই বৃষ্টি জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে। তবে বাতাসের গতি বেশি থাকায় রাজধানীর ফার্মগেট, উত্তরা ও মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়ক বিভাজক ও ফুটপাতের গাছ ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তার পাশে নির্মাণকাজের টিনও বাতাসের ধাক্কায় সরে গেছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে রাস্তায় থাকা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে দেখা যায়। একই সঙ্গে গরম থেকে মুক্তি মিলবে বলে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করছিলেন তাঁরা। সাধারণত কালবৈশাখী ঝড় পাঁচ থেকে আট মিনিট স্থায়ী হয়। কিন্তু রাজধানীর এই ঝড় ১২ মিনিট ধরে চলে।  

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল সবচেয়ে বেশি, ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। বছরের এই সময়ে কোনো এলাকায় ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বাতাস বয়ে গেলে সেখানে কালবৈশাখী আঘাত হেনেছে বলে ধরা হয়। সাধারণত এপ্রিল মাসের শুরু থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী আঘাত হানা শুরু করে। কিন্তু এ বছর টানা দাবদাহ বয়ে গেলেও ঢাকায় কালবৈশাখীর আঘাত হানার ঘটনা এই প্রথম। এর আগে ঢাকাসহ দেশের আরও ৮-১০টি জেলায় ঝড় হলেও তার বাতাসের গতিবেগ এখনো নিশ্চিতভাবে জানতে পারেনি আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, দিনে একটানা দীর্ঘ সময় বেশি তাপমাত্রা থাকলে এবং বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে বিকেলে কালবৈশাখীর জন্য অনুকূল আবহাওয়া তৈরি হয়। আজ এ কারণেই কালবৈশাখী আঘাত হানল। আগামীকাল শুক্রবারও ঢাকাসহ দেশের চারটি বিভাগের দু-একটি জায়গায় কালবৈশাখী আঘাত হানতে পারে।

তবে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর তপ্ত অবস্থা দেখে বিকেলে যে এমন ঝোড়ো হাওয়া আসবে, তা আন্দাজ করা কঠিন ছিল। বিকেল চারটা পর্যন্ত রাজধানীতে গরম ছিল। বেলা তিনটায় রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশে মেঘ না থাকায় আর বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় রাজধানীজুড়ে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়েছিল। সেখানে বিকেল পাঁচটা থেকে আবহাওয়া একদম বদলে যেতে শুরু করে। এরপর মেঘের গর্জনের সঙ্গে শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি।

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভ্যাপসা গরমে রাজধানীসহ দেশের অর্ধেক এলাকার বাসিন্দারা কষ্টে ছিলেন। এদিন দেশের বেশির ভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যায়। দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা উঠেছিল বান্দরবানে ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বাইরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগেও দাবদাহের তাপমাত্রা, অর্থাৎ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, আজ ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল বিভাগ ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে দাবদাহ বয়ে যাবে। আগামীকালও তা বয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি আকাশে মেঘও বাড়তে পারে। ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। এতে দাবদাহের দাপট কমে আসতে পারে। বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে দাবদাহ চলে যেতে পারে।

আরএস