যুব উন্নয়ন সংসদ ঢাকার মাদক বিরোধী সেমিনার

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩, ০৮:৪০ পিএম
যুব উন্নয়ন সংসদ ঢাকার মাদক বিরোধী সেমিনার

যুব সমাজকে বিকলাঙ্গ করার জন্য সীমান্ত দিয়ে মাদক ঢুকছে-বিচারপতি শহিদুল ইসলাম

আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস উপলক্ষ্যে যুব উন্নয়ন সংসদ ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, আমাদের প্রতিবেশি দেশ থেকে গত ১৫ বছরে নতুন করে ৫শত ফেনসিডিল কারখানা স্থাপন করে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায়  কয়েক হাজার মাদকদ্রব্য উৎপাদনের কারখানা আছে। দেশের যুব সমাজকে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকলাঙ্গ করার জন্যই সীমান্ত দিয়ে মাদক ঢুকছে। এই অবস্থায় দেশের যুবসমাজকে বাঁচাতে পারে আল কুরআন ও রাসুলে সা. এর সুন্নাহর আলোকে নৈতিক শিক্ষা।

বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর মাদক কেনাবেচা করে অর্থ পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। এশিয়ার দেশগুলো বিবেচনায় নিলে মাদকের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশ একেবারে শীর্ষে রয়েছে।

২৪ জুন শনিবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে "সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন মাদকমুক্ত সমাজ" শীর্ষক সেমিনার বক্তারা এইসব কথা বলেন। 

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মু. শহিদুল ইসলাম। বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে ও যুব উন্নয়ন সংসদ, ঢাকার চীফ কো-অর্ডিনেটর কামাল হোসাইনের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফয়সাল রাহাত। সেমিনারে আরও বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট ড. গোলাম রহমান ভুইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মু. শহীদুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহঃ সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সাইফুর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আব্দুল মান্নান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আতিয়ার রহমান, ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সাজ্জাদ। আরও উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ এর প্রাক্তন সহ-সেক্রেটারি জেনারেল ইঞ্জিঃ শেখ আল আমিন, বিশিষ্ট জাগরণী গণসঙ্গীত শিল্পী লিটন হাফিজ চৌধুরী, যুবনেতা আব্দুস সাত্তার সুমন, এডভোকেট মাহফুজুর রহমান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বিচারপতি মু. শহিদুল ইসলাম বলেন, এখন সমাজের সব জায়গায় মাদক পাওয়া যায়। দেশের যুব সমাজকে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকলাঙ্গ করার জন্য সীমান্ত দিয়ে মাদক ঢুকছে। মাদককে ঘৃণা করতে হবে। আমাদের দেশের পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে মাদকের প্রতি ঘৃণা তৈরি করতে হবে। দেশের শিক্ষামন্ত্রীকে আমি অনুরোধ করছি আমাদের পাঠ্য পুস্তকের মধ্যে সুরা বনি ইসরাইল ও সুরা লোকমান অন্তভুক্ত করার জন্য। এই দুটি সুরার নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারলেই সমাজ মাদকমুক্ত হবে, দেশের যুব সমাজ তথা গোটা জাতি উপকৃত হবে।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপক করেন বিশিষ্ট ডা. ফয়সাল রাহাত বলেন, মাদক গ্রহণের ফলে ব্যক্তির মস্তিষ্কের রসায়ন পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে। নৈতিক বিবেচনাবোধের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতি কমে যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা জনিত রোগ, ব্যক্তিত্বের রোগ, ম্যানিয়া, ও সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর ফলে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়, নৈতিক বন্ধন ও মূল্যবোধ দুর্বল হয়ে যায়, চুরি জালিয়াতি সহ অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত হয়ে পড়ে। প্রিয়জন ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রায় অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে যৌন নিপীড়নকারীদের প্রায় ৬০-৬৫% মাদক গ্রহণ করে থাকে। পারিবারিক সহিংসতায় জড়িত পুরুষদের মধ্যেও প্রায় ৫০% মাদক গ্রহণ করে থাকে। খুন বা হত্যার সাথে সম্পৃক্ত প্রায় ৪৪% মানুষও মাদক গ্রহণ করে থাকে।

আরএস