জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক আমার সংবাদ ও দ্য ডেইলি পোস্টের সম্পাদক-প্রকাশক, চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের দাতা সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা হাশেম রেজার বিরুদ্ধে মিথ্যা হামলা-মামলা, ভাঙচুর, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘হাশেম রেজা সমর্থক গোষ্ঠী’।
শনিবার (৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন কুড়ুলগাছি আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান, সহসভাপতি ফিরোজ উদ্দিন, উপদেষ্টা তারিফুজ্জামান মিন্টু, আব্দুল কুদ্দুস, আফতাব উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জুলফিকার আলী জুলু, যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হবি, সমাজসেবক আবু হানিফ, আশরাফুল মেম্বার, জসিম মেম্বার, আবুল হাশেম মেম্বার, শাহিন শাকিলসহ এলাকার বিশিষ্টজনরা।
এ সময় সবার উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন হাশেম রেজা। তিনি সবাইকে শান্ত করে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে প্রশাসনসহ মিথ্যা হামলা-মামলা দায়েরকারীদের উদ্দেশে জানাতে চাই— আমি জনগণকে কখনো বিপদে ফেলতে চাই না। বরং জনগণের উপকার করতে গিয়ে আমি বারবার হামলা-মামলা, অপহরণ, হত্যাচেষ্টার একাধিক মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছি। আমি প্রশাসন, সাংবাদিক বন্ধুসহ সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলতে চাই, কিছু দুষ্কৃতকারী আমার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা অভিযোগ করেছে, আপনারা সরেজমিনে সেসব যাচাই-বাছাই করলেই মূল ঘটনা জানতে পারবেন। বারবার মিথ্যা হামলা-মামলা দিয়ে আমাকে তারা ফাঁসাতে চাচ্ছে। কিন্তু তা না পেরে আমাকে এখন পুরোপুরি হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার অডিও রেকর্ডও এখন এলাকার মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে।
মানববন্ধন, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাশেম রেজা সমর্থক গোষ্ঠীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন দৈনিক আমার সংবাদ, দ্য ডেইলি পোস্টের সম্পাদক-প্রকাশক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সদস্য হাশেম রেজা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সব মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। নিজেদের দোষ ঢাকতেই তারা আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার কথিত সম্পাদকের আপন বড় ভাই কুড়ুলগাছি ইউপি চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে ২০২১ সালে নির্বাচন করেছিলেন। তাদের পরিবার রাজাকার, স্মাগলার ও চোরাকারবারির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধুর সৈনিক এবং আওয়ামী লীগ পরিবারের লোকজন তাকে প্রত্যাখ্যান করে। ভিন্ন পথে কারসাজির মাধ্যমে এবং নেতাদের ভুল বুঝিয়ে যে ব্যক্তি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, তার সুস্পষ্ট জবাব নির্বাচনে তাকে হারিয়ে দিয়ে প্রমাণ দিয়েছিল অত্র এলাকার জনগণ। ওই নির্বাচনে পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন; কিন্তু নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ওই কথিত সম্পাদকের বড় ভাই পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন।
নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ওই কথিত সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আমাকে দোষারোপ করতে থাকেন এবং বিভিন্নভাবে আমার সম্মানহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির চেষ্টা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ জুলাই সকাল সাড়ে ১২টায় মাইকিং করে কুড়ুলগাছি সমবায় সমিতির মিটিং ভাঙাকে কেন্দ্র করে একটি মারামারি সংঘটিত হয়। পূর্বনির্ধারিত মিটিংয়ে ওই কথিত সম্পাদক প্রধান অতিথি হতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তা না হতে পারায় ওই মারামারি সংঘটিত করা হয়। ওই মারামারিকে কেন্দ্র করেই কথিত সম্পাদক নারী কেলেংকারি ও ধর্ষণ মামলাসহ আমার নামে তিনটি মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলতে চাই, কথিত এসব মিথ্যাবাদী ও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলকারী আমার (হাশেম রেজার) রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করার মানসেই এসব অপকর্ম করে চলেছে। এখানেই শেষ নয়, ওই সম্পাদক বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরে আমার নামে (‘হাশেম রেজা’) ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি করে জমা দিয়ে বিভিন্নভাবে মানহানির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এনএসআই, ডিএসবি, পিবিআই, ডিবিসহ বাংলাদেশ পুলিশের তদন্তে এসবের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় তারা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। এছাড়াও আমাকে হত্যার পরিকল্পনাও করেছেন কথিত ওই সম্পাদক। ইতিপূর্বে এ-সংক্রান্ত একটি অডিও ফাঁস হয়, যেখানে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
এত কিছু করেও আমার কোনো ক্ষতি করতে না পেরে এবার দুষ্টুচক্রটি গ্রামের একজন সাজাপ্রাপ্ত চোর বাবুর আলীর সহযোগিতা নেয়। বাবুর আলী কথিত ওই সাংবাদিকের ডান হাত হিসেবে পরিচিত। সে তক্ষক-সাপ এবং কয়েন-মূর্তির ব্যবসা করে। এছাড়াও সে কুড়ুলগাছি মাঠপাড়ার ইছার গরু, কামারপাড়া বাড়াদির ইমান আলীর মহিষ, ধান্যঘরার সেলিমের গরু ও কুড়ুলগাছির সাইদুরের মহিষ চুরি করেও জরিমানা গোনে। এই দুর্ধর্ষ চোর কুড়ুলগাছি আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতির গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায়, যাতে সেচের অভাবে শত শত কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ওই চুরি ধরা পড়লে আমরা তার বিচার করি। আর সেই রাগে প্রতিনিয়ত ওই চোর আমার ক্ষতিসাধনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
কথিত ওই সম্পাদকের ডান হাত হিসেবে পরিচিত আরেকজন হলেন আশরাফুল হক জাকির— যে সাবেক শিবির নেতা ও ছাত্রলীগ নেতা হত্যামামলার আসামি। এখন ওই কথিত সম্পাদকের বড় ভাই দর্শনা প্রেস ক্লাবের সামনে ‘কুড়ুলগাছি ইউনিয়নে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মারামারি, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, মানুষ হত্যাচেষ্টা ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ন্যায়বিচারের দাবিতে মানববন্ধন’ এবং ‘সাংবাদিক শিমুল রেজাকে অপহরণ করে হত্যাচেষ্টা করায় হাশেম রেজাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন’ শিরোনামে দুই ব্যানারে মানববন্ধন করেছে। যে মিথ্যা ও বানোয়াট কার্যক্রমের কোনো ভিত্তি নেই। কথিত ওই সম্পাদকের বড় ভাইয়ের নির্দেশে এই মানববন্ধনের নেতৃত্ব দেন বিএনপি নেতা মাসুদ রানা নামে আরেক সন্ত্রাসী। এই মাসুদ রানা বলেছেন, হাশেম রেজা আমার (মাসুদ রানা) মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছেন।
এ বিষয়ে আমি বলতে চাই, আমার নামে যারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মারামারি, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, মানুষ হত্যার চেষ্টাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেছে, তারা যেন উল্লিখিত ‘টাইটেলগুলো’ প্রমাণ করে দেয়। আর কথিত সাংবাদিক শিমুল রেজা গ্রামের মানুষদের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে এক-দুইশ টাকা চাঁদা নিয়ে থাকে এবং তার বাবা একজন দাগী চোর। সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করার জন্য তাকে ডাকা হয়েছিল এবং আমার অফিসে বসে তার সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছিলাম। পুলিশ এসে তাকে কোনো হাত বাঁধা অবস্থায় দেখেনি। অথচ সে ৯৯৯-এ ফোন করে বলেছে আমি হাশেম রেজা তাকে হাত-পা বেঁধে অপহরণ করেছি। সে আরও বলেছে, কার্পাসডাঙ্গা বাজার থেকে তাকে উঠিয়ে আনা হয়েছে। সার্বিক বিষয় অনুসন্ধানে আমি বলতে চাই, তার ভিডিও ফুটেজ জনগণের সামনে প্রকাশ করা হোক। ওই ব্যক্তি আরও বলেন, আমি হাশেম রেজা নাকি তার মোবাইল ফোন চুরি করেছি— যা এক অতিহাস্যকর ও ঘৃণার অযোগ্য এক বিষয়।
অনুষ্ঠানে হাশেম রেজা সমর্থক গোষ্ঠীর অন্যান্য নেতা বলেন, আমরা বলতে চাই— হাশেম রেজা স্বনামধন্য দুটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ও প্রকাশক, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের শিক্ষানবিশ আইনজীবী, আওয়ামী লীগ সেন্ট্রাল সাব-কমিটির মেম্বার এবং আগামীতে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের মন্তব্য মারাত্মক মানহানিকর ও ঘৃণ্য এক চক্রান্ত। এ বিষয়ে আমরা চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সব সম্মানিত সম্পাদক ও সাংবাদিকের কাছে অনুরোধ করব, ইতিপূর্বে জনাব হাশেম রেজার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, সে বিষয়গুলো যদি আপনারা আমাদের এলাকার জনসাধারণের কাছে গিয়ে সত্য ঘটনা শুনে-বুঝে সংবাদ প্রকাশ করেন, তাহলে জনসাধারণ সত্য ঘটনাটি জানাতে পারবে। আর চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার, দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ ও দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে অনুরোধ থাকবে— বিষয়গুলো তদন্ত করে সঠিক বিচারে সহযোগিতা করার জন্য এবং সম্পাদক হাশেম রেজার বিরুদ্ধে যেসব সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, সে বিষয়গুলো তদন্ত করে দামুড়হুদা থানায় শিমুল রেজা যে মিথ্যা মামলা করেছেন, তার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দ্রুত সঠিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হোক।
পরিশেষে হাশেম রেজা বলেন, উপরোক্ত আন্ডারগ্রাউন্ড ওই পত্রিকার সম্পাদক কর্তৃক আমার বিরুদ্ধে এ যাবৎ যেসব মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে, তা যদি দুষ্টুচক্রটি প্রমাণ করতে পারে, তাহলে এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব আমি হাশেম রেজা বহন করব। এ ব্যাপারে আমি এলাকাবাসীসহ সাংবাদিক ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
লিখিত বক্তব্য শেষে হাশেম রেজা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় তিনি বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ। আপনারা ইচ্ছা করলেই তদন্ত করে মূল ঘটনা উদ্ঘাটন করতে পারেন। তাই আপনারা কারো বানানো ও নাটকের গল্প শুনে নিউজ না করে সরাসরি স্পটে গিয়ে তদন্ত করে সে অনুযায়ী রিপোর্ট করলে দেশ-জাতি সঠিক তথ্যগুলো পাবে; এর ফলে উপকৃত হবে সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক সমাজ।
আরএস