তিন ফসলি জমিতে কোনো শিল্প-কারাখানা নয় : ভূমিমন্ত্রী

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩, ০৬:১৩ পিএম
তিন ফসলি জমিতে কোনো শিল্প-কারাখানা নয় : ভূমিমন্ত্রী

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন ফসলি জমিতে কোনো শিল্প-কারাখানা স্থাপন না করার আহ্বান জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

শনিবার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং বাংলাদেশের টেকসই নগরায়ণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মেট্রোরেলের অবকাঠামোর সম্প্রসারণ আরও ১০-১৫ বছর চলমান থাকবে, ফলে যানজট কমবে এবং নগরবাসী উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা উপভোগ করবেন। রাজধানীর ঢাকার উপশহরগুলোকে আরও উপযোগী করার জন্য সরকার নিরসলভাবে কাজ করছে। বর্তমান সরকার অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন ও শিল্পায়নে জোরারোপ করার কারণে আমাদের অর্থনীতিতে গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, তিন ফসলি জমিতে কোন শিল্প-কারাখানা নয়, কারণ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে দুই ফসলি জমিতেও শিল্প কারখানা স্থাপন না করার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানাই।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর নগর আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের জলবায়ু, নদী মারাত্বকভাবে দূষণ করছে, এর প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, গ্রাম উন্নয়নে শুধু প্রকল্প নিলেই হবে না, জীবনযাপনে সব প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকা- বিস্তার করতে হবে, যেন গ্রামের মানুষ আর্থিকভাবে সক্ষম হয়। ইকোনমিক জোনের আশেপাশের জায়গায় শ্রমিকদের বাসস্থান তৈরিতে সরকার কাজ করছে বলে তিনি অভিহিত করেন।  

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মোঃ সামীর সাত্তার বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে নগরায়ন এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে আমাদের জিডিপির ৬৫% আসছে শহরাঞ্চল হতে। তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রিক নগরায়নের জন্য আমরা যেভাবে যানজট, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ প্রভৃতি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি, সেই সাথে আমাদের কর্মঘন্টা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে জ্বালানী খরচ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি, এমতাবস্থায় ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের কোন বিকল্প নেই।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি এবং ভিত্তি স্থপতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি ইকবাল হাবিব।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৩৩ শতাংশ লোক নগরে বাস করেন এবং ঢাকা মহানগরে প্রতিবছর নতুন করে পাঁচ লাখ লোক যোগ হচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত গৃহহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বর্জ্য বৃদ্ধি, পানি ও বায়ু দূষণ, বৃক্ষ নিধন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা, যানজট ও স্বাস্থ্য সংকটের শিকার হচ্ছি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থপতি অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, ঢাকায় মানুষের আসার প্রবণতা হ্রাসে রাজধানীর বাইরে জনগণের জীবনযাত্রা পরিচালনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঢাকা শহরের জন্য একটা ভিশন প্রয়োজন এবং এজন্য সুশাসনের পাশাপাশি জনগণের সম্পৃক্ততা একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, রাজউকের পুনঃগঠন করা এখন সময়ের দাবি। এছাড়াও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিটি শহরের মাস্টারপ্ল্যান থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

আরএস