আমি ব্যবসায়ী, মন্ত্রী হয়েও মন্ত্রী মন্ত্রী ভাব আমার হলো না- এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, মনের দিক থেকে আমি এখনো ব্যবসায়ী রয়ে গেলাম। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের দেখে ভালো লাগে যে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আছি। যাদের রপ্তানি ট্রফি দিচ্ছি তাদের দেখে মনে হয় তারা আমার ঘরের ও প্রাণের মানুষ।
বুধবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০২০-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়েে সভাপতি মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান স্বাগত বক্তব্য দেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতি বছর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি যাদের ওপর ভরসা করে তাদের সম্মাননা দিতেই এখানে এসেছি। আমার সামনেই বেশ কযেকজন পরিচিত মুখ দেখছি। যাদের সঙ্গে এক সময় ব্যবসায় জড়িত ছিলাম। আজ আমি মন্ত্রী হয়েছি মঞ্চে এসে বসেছি। তবে তাদের মধ্যে থাকতে পারাটাই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
তিনি বলেন, আমি ১৯৮৫ সালে ছোট একটি গার্মেন্টস শিল্প দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। তখন আজাদ ভাই আমাকে ছোট একটি সাব-কন্ট্রাক দেন সেটা দিয়েই শুরু করি। আজ সে সব কথা মনে পড়ে। আজ ব্যবসায়ীরা বিলিয়ন ডলার রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন। এটা আসলে গৌরবের বিষয়। সেই ১২ হাজার ডলার দিয়ে রপ্তানি শুরু করে আজ ৪৫ ডলার এই গার্মেন্টস শিল্প থেকে আসছে। আজ সবাইকে দেখে ভালো লাগছে। আর ভালো লাগে এজন্য যে আমি ব্যবসায়ী, যদিও মন্ত্রী হয়েছি। কিন্তু মন্ত্রী হয়েও মন্ত্রী মন্ত্রী ভাব আমার হলো না। মনের দিক থেকে আমি এখনও ব্যবসায়ী রয়ে গেলাম।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের দেখে ভালো লাগে যে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আছি। যাদের রপ্তানি ট্রফি দিচ্ছি তাদের দেখে মনে হয় তারা আমার ঘরের ও প্রাণের কাছের মানুষ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা স্বপ্ন আছে ২০২৩ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির। তবে এটা আরও বেশি করার ইচ্ছা। এটা শুধু একটা খাত থেকে আশা করি না। অনেকগুলো খাত চাচ্ছে এগিয়ে আসুক। শুধু গার্মেন্টস খাতের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে, এ খাতের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে যে পণ্যগুলো বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে সেগুলো আরও এগিয়ে যাক। যেমন আইসিটি, লেদার, প্লাস্টিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, মেশিনারিজ, জুট প্রডাক্ট এসবগুলো ২ থেকে ৩ বিলিয়ন করতে পারে তাহলে গার্সেন্টস খাত মিলিয়ে ১০০ বিলিয়ন করা খুব বেশি কঠিন তা কিন্তু নয়। একটু প্রচেষ্টা আর সার্বিক অবস্থাটা যদি অনুকূল থাকে তাহলে অর্জন করা সমস্যা হবে না।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দেখেছি রপ্তানি ১৬ বিলিয়ন থেকে আজ চারগুণ প্রায় হয়ে গেছে। তারপর আমাদের শিল্প কারখানাগুলো আধুনিক হয়েছে। পোশাক শিল্পে অনেকগুলো গ্রিন শিল্পকারখানা রয়েছে, যা পৃথিবীতে আমরা সেরা। হংকংয়ের যে প্রতিষ্ঠান এসবের রেটিং করে তাদের মতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থা রয়েছে। সেটা ভালো লক্ষণ যে আমাদের কারখানাগুলো আধুনিক হচ্ছে। বৈশ্বিক অবস্থানে তাদের অবস্থান বেশ এটা গৌরবের বিষয়। আমাদের শিল্পগুলো তৈরি হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য। পাশাপাশি আমাদের শ্রমিকদের মানও ভালো।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে অনেক নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। যেগুলো কখনো চিন্তা করিনি। যেমন মাথার চুল, নাড়িভুড়ি, নারিকেলের ছোবড়া, কচুরিপানা ও রপ্তানি হচ্ছে। এই যে উদ্ভাবনী শক্তি, যা আন্তর্জাতিক বাজারেও আলোচিত হচ্ছে। এছাড়া ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চল ওপেন করে দিয়েছি। আরও ৯০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০৩০ সালের মধ্যে হবে। আন্তর্জাতিক বায়ারদেরও অনুরোধ করছি আপনারা আসেন দেখেন বাংলাদেশ বিনিয়োগের ভালো অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই উৎসাহী আমাদের দেশে বিনিয়োগ করার জন্য।
তিনি বলেন, আজ আপনাদের ট্রফি দিয়ে সম্মানিত করতে চাই, কারণ আমাদের কোনো যোগ্যতা নেই। সব কিছু সম্ভব হয়েছে আপনাদের জন্য। সুতরাং যা কিছু গৌরবের, আনন্দের, সাফল্যের আপনারাই তার ধারক আপনারাই সেটা পাবেন।
আরএস