‘আগামী প্রজন্মের জন্য পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি’

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০৯:২৪ পিএম
‘আগামী প্রজন্মের জন্য পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি’

আগামী প্রজন্মের জন্য সকল নাগরিকের নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন নাগরিক সমাজ। সরকার এখন পর্যন্ত নিরাপদ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য পানির নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি।

আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ‘শ্রেণিভিত্তিক পানির মূল্য ও সুপেয় পানির অঙ্গীকারের বাস্তবতা-আমাদের মতামত’ শীর্ষক নাগরিক মতবিনিময় সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব (অব.) জনাব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত নিরাপদ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য পানির নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি। তিনি ঢাকা ওয়াসার উদ্দেশ্যে বলেন, ঢাকা ওয়াসা প্রথমে শীতলক্ষ্যা ও পরে মেঘনা নদী থেকে পানি সরবরাহের প্রকল্প গ্রহণ করে। 

অথচ ঢাকার মধ্যে থাকা বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর পানি কিভাবে ব্যবহার করা যায় তার পরিকল্পনা করেনি। তাদেরকে বললে তারা জানায় যে এই দুই নদীর পানির ইতিমধ্যে দূষিত হয়ে গেছে। তাহলে প্রশ্ন হলো আগামীদিনে পদ্মা, শীতলক্ষ্যা এবং মেঘনা নদীর পানি যে দূষিত হবে না তার নিশ্চয়তা কি? পানি অমূল্য সম্পদ। 

তাই পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রেণিভিত্তিক না করে উচ্চ শ্রেণির জন্য করের হার বৃদ্ধি করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা ওয়াসা’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (বাণিজ্য) উত্তম কুমার রায় বলেন, পানির মূল্য নির্ধারণের জন্য শ্রেণিভিত্তিক যে পরিকল্পনা তার জন্য একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র সমীক্ষা করেছে। এ ব্যাপারে আমরা নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এবং সরকারের বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে সেই সাথে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। 

পানির মূল্য বৃদ্ধির কথা যেভাবে গণমাধ্যমে আসছে যে মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে জুন মাস থেকে তা সঠিক নয়। কারণ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত শুধু আমাদের একার নয়, সরকারের সিদ্ধান্ত সবার আগে। তাই এ বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তিনি আরো বলেন, আমাদের পানির উৎপাদন খরচ বেশী বলে যে সমালোচনা করা হচ্ছে মনে রাখতে হবে গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুতের দাম বাড়লেও আমরা কিন্তু সেভাবে পানির মূল্য বৃদ্ধি করিনি। ঢাকা ওয়াসা সকলের জন্য সহনীয় এবং সাধারণ ও নি¤œআয়ের মানুষের জন্য পানির মূল্য আরো কমিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে।

সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, একটি গণশুনানীর ভিত্তিতে পানির মূল্য নির্ধারণ করা হোক। কারণ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি কেন হচ্ছে আর প্রকল্পের নামে যে অনিয়ম আছে বলা হয় তার জন্য গণশুনানী করে সঠিক সিদ্ধান্ত ওয়াসাকে নিতে হবে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব মুশতাক হাসান মুহাঃ ইফতেখার বলেন, পানির মূল্যের চাইতে সুপেয় পানি এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সকল নাগরিকের পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।

সমকালের  স্পেশাল করসপন্ডেন্ট অমিতোষ পাল বলেন, ঢাকা ওয়াসা বর্তমানে লাভে রয়েছে। অথচ পানির মূল্য বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অনেক প্রকল্পে লোকসান হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসাকে লাভজনক করতে চায় সরকার। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান একথাটি ভুলে গেলে চলবে না।

ইউটিলিটি রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ডুরা) এর সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা বলেন, পানির মূল্য কোনভাবেই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় যাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে সেদিকে নজর রেখেই ঢাকা ওয়াসাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি উচ্চবিত্তদের পানির মূল্য বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত সেটি সঠিক বলে মনে করেন।

বাপা’র জয়েন্ট সেক্রেটারী জনাব আমিনুল রসুল বলেন, এখনো দূর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি আছে। তাই সবার আগে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। ব্যয়ভার কমিয়ে আনতে হবে ওয়াসাকে। সেই সাথে পানির মূল্য বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত তা থেকে বেরিয়ে এসে সকলের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।

বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম বলেন, যে সকল প্রকল্প নেয়া হয়েছে তা আগামীদিনের কথা চিন্তা করেই নেয়া হয়েছে। আমাদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য বা অভিযোগ থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে কিছু কিছু জায়গায় এখনো দূর্বলতা রয়েছে। আমরা দ্রুত সকল সমস্যার সমাধান করবো ইনশাআল্লাহ।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের আহ্বায়ক জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদ্যুতের ন্যায় ব্যবহারের উপর পানির মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। এলাকাভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ করলে অনেক নি¤œআয়ের সাধারণ মানুষও উচ্চমূল্যের পানির আওতায় পড়ে যেতে পারে। এতে করে সুবিধার বদলে অসুবিধাই বেশী হতে পারে। তাই শ্রেণিভিত্তিক নয় ব্যবহারভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ করা হোক।

আরো বক্তব্য রাখেন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস.এম নাজের হোসাইন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন, মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য এড. সাহেদা বেগম, এড. বিল্লাল হোসেন প্রমুখ।

এইচআর