বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও নাম ব্যবহার করে পাসপোর্ট বানাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এ কাজে সক্রিয় বেশ কয়েকটি দালাল চক্র। সঙ্গে আছেন পাসপোর্ট অফিসের আনসার সদস্যরাও। বিশেষ অভিযানে জড়িত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- তিন রোহিঙ্গা নাগরিক উম্মে ছলিমা ওরফে ছমিরা, মরিজান, রশিদুল; রোহিঙ্গা দালাল আইয়ুব আলী, মোস্তাকিম, মো. রায়হান; বাঙালি দালাল রাজু শেখ, শাওন হোসেন নিলয়, ফিরোজ হোসেন, মো. তুষার মিয়া, মো. শাহজাহান শেখ, মো. শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমেদ হোসেন, মো. মাসুদ আলম, মো. আব্দুল আলিম, মো. মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন ও মো. সোহাগ এবং আনসার সদস্য জামসেদুল ইসলাম।
গ্রেপ্তারের সময় জব্দ করা হয় ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি এনআইডি, ৫টি কম্পিউটার, ৩টি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্ট তৈরির দলিলপত্র।
গোয়েন্দা প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার দালালদের মোবাইলে শত শত পাসপোর্ট করে দেওয়ার প্রাসঙ্গিক সফট ডকুমেন্টস, ডেলিভারি স্লিপ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে গত তিন মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য করা ১৪৩টি পাসপোর্ট ইতোমধ্যে তারা সরবরাহ করেছে। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি রোহিঙ্গাদের, বাংলাদেশি দাগি অপরাধীদের ভিন্ন নাম ও ঠিকানায় হাজার হাজার পাসপোর্ট করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
সৌদি আরব যাওয়ার উদ্দেশে দালাল চক্রের কাছে দেড় লাখ টাকা দেয় ১৪ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা কিশোরী। বিনিময়ে মিলবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট। দালালরা প্রথমে ওই রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি এক নারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সহায়তায় জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট বানিয়ে দেয়। পরে সেই জন্মনিবন্ধন দেখিয়ে বানানো হয় পাসপোর্ট। চক্রটি ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলার নাম দিয়ে জন্মনিবন্ধন করে। এরপর বানায় এনআইডি ও পাসপোর্ট।
প্রায় ২ মাস দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ। জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও রয়েছে এই অপরাধী চক্রের সঙ্গে।
পরে রোহিঙ্গা, আনসার ও দালালসহ ২৩ জনকে গ্রেফতার করে ডিবি। চক্রটি ২০১৯ সাল থেকে হাজারের বেশি পাসপোর্ট বানিয়েছে।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে একটি চক্র রোহিঙ্গাদের খুঁজে খুঁজে বের করত। আরেকটি চক্র তাদের নামে জন্মনিবন্ধন, এনআইডি বানানোর ব্যবস্থা করত। তারপর আরেকটি চক্র তাদেরকে পাসপোর্ট বানিয়ে দিত।
সরকারি এমন স্পর্শকাতর অধিদফতরগুলোতে নজরদারি আরও বাড়ানোর পাশাপাশি সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্ত করার আহ্বান জানান গোয়েন্দা বিভাগের এ কর্মকর্তা। অসাধু এই চক্রের সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত। তাদের ধরতে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
আরএস