দেশের স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিবর্গের স্মৃতি নিদর্শন ভিত্তিক বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারীতে জাদুঘরের চারটি কিউরেটরিয়াল বিভাগের সংগৃহীত দেশের স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিবর্গের স্মৃতি নিদর্শন ভিত্তিক ‘স্মৃতি চিরন্তন’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজন করে।
জাদুঘরের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে সেই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য-সভ্যতা ও সংস্কৃতির মূল্যবান নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণা করা। বাংলাদেশে জাতীয় জাদুঘরও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এ কাজটি করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর নিদর্শনের স্থায়ী প্রদর্শনী ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয় ভিত্তিক নিদর্শনের অস্থায়ী প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে।
জাদুঘরকে বলা যেতে পারে জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে অ্যাকাডেমিক শিক্ষা প্রদান করা না হলেও জাদুঘর পরিদর্শন করে জনগণ নিজেদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে পারে। যুগে যুগে এই বাংলা ভূখণ্ডে অনেক বরেণ্য ব্যক্তির জন্ম হয়েছে এবং তাঁরা দেশ মাতৃকার জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা- সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁদের মধ্যে সীমিত সংখ্যক বরেণ্য ব্যক্তি বর্গের স্মৃতি নিদর্শন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সংগ্রহ করতে পেরেছে। এর মধ্যে কিছু নিদর্শন গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং কিছু নিদর্শন স্টোরে সংরক্ষিত রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের চারটি কিউরেটরিয়াল বিভাগের সংগৃহীত এমন ৩৭জন বরেণ্য কৃতি সন্তানের ১২৮টি নিদর্শন নিয়ে “স্মৃতি চিরন্তন” শিরোনামে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
এঁদের মধ্যে রয়েছেন: ১) হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ৩) নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া ৪) নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ৫) কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমান ৬) সৈয়দ মুজতবা আলী ৭) শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ৮) সরদার ফজলুর করিম৯) আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ ১০) পটুয়া কামরুল হাসান ১১) দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা ১২) সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৩) মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৪) শহিদ মুনীর চৌধুরী ১৫) চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম ১৬) কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ ১৭) জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদ ১৮) অধ্যাপক ড. মুস্তফা নুর-উল ইসলাম ১৯) শহিদ সাংবাদিক নিজামুদ্দিন আহমেদ ২০) ভাস্কর শিল্পী সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ ২১) শহিদ ডা. ফজলে রাব্বি ২২) কাজী মোতাহার হোসেন ২৩) রাজনীতিবিদ সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ ২৪) অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খাঁ ২৫) শহিদ লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ২৬) শহিদ ড. আলীম চৌধুরী ২৭) বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ক্যাপ: মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ২৮) বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ রুহুল আমিন ২৯) মোস্তফা জব্বার ৩০) শহিদ জ্যোর্তিময় গুহ ঠাকুরতা ৩১) সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও মানবাধিকার কর্মী মংছেনচীং মংছিন ৩২) ভাষা সৈনিক ডা. হালিমা খাতুন ৩৩) ভাষা সৈনিক শামসুল আলম ৩৪) কবি মহাদেব সাহা ৩৫) শহিদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ৩৬) শহিদ ড. আবুল খায়ের এবং ৩৭) অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মোঃ কামরুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের কীপার জনাব মোহাম্মদ মনিরুল হক। বিশেষ বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা বিভাগের কীপার জনাব শক্তি পদ হালদার এবং প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগের কীপার ড. সুমনা আফরোজ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব (যুগ্ম সচিব) গাজী মোঃ ওয়ালি-উল-হক এবং সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জাতিতত্ত্ব ও অলংকরণ শিল্পকলা বিভাগের
কীপার জনাব মো. মতিয়ার রহমান।
বর্তমান প্রজন্ম এই প্রদর্শনী থেকে বরেণ্য কৃতি সন্তানদের দেশ মাতৃকার প্রতি অবদান সর্ম্পকে জানতে পারবে এবং পরবর্তী প্রজন্মেমের কাছে পৌঁছে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং দেশের জনগণ এবং দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে যোগসূত্র স্থাপন করবে এবং দেশকে জানার পরিধি বিস্তৃত করবে।
প্রদর্শনটি ০৩ জুন ২০২৪ থেকে ১২ জুন ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিট এবং শুক্রবার বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বৃহস্পতিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন প্রদর্শনী বন্ধ থাকবে।
বিআরইউ