সময় চেয়েও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হননি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। উল্টো আত্মপক্ষ সমর্থন করে গত বৃহস্পতিবার দুদকে চিঠি দিয়েছেন। এখন বেনজীরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। খতিয়ে দেখা হবে তার পাঠানো চিঠিটিও। তবে বেনজীর আহমেদ দেশে না বিদেশে রয়েছেন তা জানায়নি দুদক।
সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের কথা তুলে ধরা হয়। এতে দাবি করা হয়, বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, পাঁচ তারকা হোটেলের শেয়ার, গাজীপুর, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত বিঘা জমির মালিকানা রয়েছে।
এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের বিপুল অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুদকের কাছে আবেদন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এর পরপরই বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পত্তির অভিযোগের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী সালাউদ্দিন রিগ্যান।
এই দুই ঘটনার পর গত ১৮ এপ্রিল দুদকের সভায় সাবেক এই পুলিশ প্রধানের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এর জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করে দুদক। কমিটির সদস্যরা হলেন, দুদক উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন। এরই মধ্যে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের জাতীয় পরিচয়পত্র, আয়কর নথি ও কোম্পানির কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক। বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবও করা হয়েছে।
এরমধ্যে গত ২৩ মে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বেনজীর আহমেদের সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) এবং গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজারের তাঁর ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেয় আদালত। আর ২৬ মে বেনজীরের স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিস্তা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির আংশিক শেয়ার ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়।
দুদক বলছে, গণমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের খবর প্রকাশের পর থেকেই সম্পদ রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠে বেনজীর। এ সময় নিজেদের শতাধিক ব্যাংক হিসাবও বন্ধ করে দেন তিনি। একে একে ৫০টি এফডিআর ভেঙে নগদ প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলে নেন বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া ব্যাংকের হিসাবে থাকা আরও কয়েক কোটি টাকা এ সময় তুলে নেওয়া হয়।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই জানা যায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়েছেন। তবে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন সে সম্বন্ধে সরকারের কাছে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
গত ৬ মে বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুদক। এর একদিন আগে দেওয়া এক আবেদনে হাজির হতে সময় চান সাবেক পুলিশ প্রধান। পরে তাকে ২৩ জুন হাজির হতে নতুন সময় নির্ধারণ করে দুদক। তার স্ত্রী ও মেয়েরাও দুদকে হাজির হতে সময় প্রার্থনা করেন।
সেই হিসেবে রোববার হাজির হওয়ার কথা ছিলো বেনজীর আহমেদের। কিন্তু এবারও তিনি আসেননি। বরং ২১ জুন নিজের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আরেকটি চিঠি দিয়েছেন বেনজীর। এতেও তিনি উল্লেখ করেননি কোথায় আছেন?
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, ‘তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন তার আইনজীবির মাধ্যমে। সেখানে অবশ্য তিনি তারিখ বৃদ্ধির বিষয়ে কিছু লেখেন নি। সেখানে মূলত তার ও স্ত্রী কন্যাদের দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অজর্ন করা সংক্রান্ত নিজের অবস্থানটা আসলে বর্ননা করেছেন।’
আগামী সোমবার দুদকে হাজির হওয়ার কথা বেনজীরের স্ত্রী ও তিন মেয়ের। তারাও যে আসছেন না সেটি বেনজীরের চিঠিতে প্রায় স্পষ্ট।
খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, ‘সময় দেওয়ার বিষয়টি এখানে এখন আর বিবেচ্য নয়। এখন অনুসন্ধানকারী টিম যে চিঠিটা পেয়েছেন সেটার বিষয়েই তারা কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।’
নতুন করে পাওয়া সম্পত্তির আগ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১০ জেলায় বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ২ হাজার ৩৮৫ বিঘা বা ৭৮৬ একর জমি থাকার তথ্য পাওয়া যায়। বাকি জেলাগুলো হলো গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, বান্দরবান ও কক্সবাজার। এসব জেলায় রয়েছে জমি, খামার, রিসোর্ট। সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও আছে জমি।
দুদকের তলবে সাড়া না দেয়ায় আইন অনুযায়ী বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া সময়ের ব্যাপার। জারি হতে পারে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। যদিও কেউ জানেন না, বেনজীর দেশে না বিদেশে রয়েছেন।
আরএস