জিআই স্বীকৃতি পেতে ৪৯৪ পণ্যের তালিকা তৈরি করেছে সরকার

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৪, ০৩:৪০ পিএম
জিআই স্বীকৃতি পেতে ৪৯৪ পণ্যের তালিকা তৈরি করেছে সরকার

পণ্যের উৎসস্থল তুলে ধরার পাশাপাশি দেশে-বিদেশে সেই পণ্যের উচ্চমূল্য নির্ধারণ ও উৎপাদকদের আর্থিক সুবিধা দিতে সরকার ভৌগোলিক নির্দেশকের (জিআই) স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ৪৯৪ পণ্যের তালিকা করেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) গত জুনের প্রথম সপ্তাহে সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জিআই সনদ পাওয়ার মতো পণ্যের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে বলেছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে জামদানি, ইলিশসহ মোট ৩১ পণ্যের জিআই নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে এবং আরও বেশ কয়েকটি পণ্যের জিআই নিবন্ধনের আবেদন বিবেচনা করা হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, দেশের কয়েকটি জেলা বা অঞ্চলে এখনো জিআই নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য অনেক পণ্য আছে। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন পেলে পণ্যের বাণিজ্যিক গুরুত্ব যেমন বেড়ে যাবে। উৎপাদনকারীরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

এ ছাড়া, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

প্রত্যেক জেলায় কমপক্ষে একটি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা আছে বলেও চিঠিতে জানানো হয়।

ডিপিডিটির মহাপরিচালক মুনিম হাসান বলেন, ‍‍`একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় আমরা ৪৯৪ পণ্য সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ের তথ্য নিয়ে তালিকা করেছি।‍‍`

সেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি অলাভজনক এবং স্থানীয় পণ্য ও ই-কমার্স খাতের ওপর গবেষণা-জরিপ চালায়। পাশাপাশি জিআই-স্বীকৃতি পাওয়া পণ্যের সংখ্যা বাড়াতেও কাজ করে।

গত মার্চে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার কথা বলা হয়েছে বলে জানান ডিপিডিটির মহাপরিচালক।

গত ১৬ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন বিভাগের পোস্টের পর সুন্দরবনের মধুর জিআই মর্যাদা পেতে তাড়াহুড়া শুরু হয়। বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই প্যারাবন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পড়েছে। এই বনের প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে।

ডিপিডিটি এ পর্যন্ত ৩১ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে। তিন পণ্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আরও ১৫ পণ্যের স্বীকৃতির জন্য কাজ চলছে।

‍‍`কেউ আপত্তি না জানালে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও ২০ পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পাবে,‍‍` বলে জানিয়েছেন মুনিম হাসান।

এ ছাড়া, আরও ২৫ পণ্যকে এ ধরনের মর্যাদা দেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে ডিপিডিটি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১০০ পণ্যকে জিআই হিসেবে নিবন্ধিত করার লক্ষ্য আছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‍‍`সূর্যপুরী আম শুধু এই জেলাতেই হয়। আমরা এর জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করব। আবেদন করতে অনেক তথ্য ও কাগজপত্র প্রয়োজন। সেগুলো সংগ্রহের কাজও প্রায় শেষ।‍‍`

চলতি সপ্তাহেই ডিপিডিটিতে আবেদন পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও) জিআই পণ্যের বৈশ্বিক স্বীকৃতি দেয়। ফলে একজন ক্রেতা জানতে পারেন পণ্যটি কোথাকার। সেই পণ্যের গুণগতমান ও খ্যাতি সম্পর্কেও জানা যায়। জিআই সেই পণ্যের মেধাস্বত্ব ও আইনি সুরক্ষা দেয়।

বাংলাদেশে পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেয় ডিপিডিটি।

টাঙ্গাইলের শাড়ি ও সুন্দরবনের মধুকে ভারত জিআই স্বীকৃতি দেওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ সরকার। তারপর দেশি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি পেতে তোড়জোড় শুরু করে।

গত ৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হয়। তা জানার পর টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন গত ৬ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে। গত ২৫ এপ্রিল টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই সনদ দেওয়া হয়।

ভারতের ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড ২০২১ সালের ১২ জুলাই সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে। গত ২ জানুয়ারি তা দেওয়া হয়।

গত ১৬ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন বিভাগের পোস্টের পর সুন্দরবনের মধুর জিআই মর্যাদা পেতে তাড়াহুড়া শুরু হয়। বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই প্যারাবন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পড়েছে। এই বনের প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক সাত বছর আগে মধুর জিআই মর্যাদার জন্য আবেদন করেছিলেন। গত ৩০ জুন তা নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয় ডিপিডিটি।

২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৭ পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আর গত আট মাসে ১৪ পণ্য এই স্বীকৃতি পেয়েছে।

আরএস