ডিবি প্রধান

সমন্বয়কদের দিয়ে জোর করে বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগ গুজব

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম
সমন্বয়কদের দিয়ে জোর করে বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগ গুজব

আন্দোলন বন্ধে ছয় সমন্বয়ককে দিয়ে জোর করে বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগটি গুজব বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের শিগগির ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে ডিবি কার্যালয়ের প্রধান ফটকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

হারুন বলেন, জোর করে সমন্বয়কদের দিয়ে বিবৃতি দেওয়ার গুজবটি যারা ছড়িয়েছেন তাদের প্রতি অনুরোধ, গুজব ছড়াবেন না। ডিবি একটি আস্থার জায়গা। সেখানে কাউকে আটকে রাখা হয় না, জোর করে বিবৃতি নেওয়া হয় না। তারা বরং অনুভব করেছে সরকার তো সব দাবি মেনেই নিয়েছে। তারা আমাদের কাছে লিখিতভাবে বলেছে। যে কারণে তারা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

ডিবিপ্রধান বলেন, আমরাও তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, ছাত্র ছিলাম। এই ছয় সমন্বয়ককে নিরাপত্তার স্বার্থে ডিবিতে এনেছি। তারা আমাদের সঙ্গে আছে। এই সমন্বয়কারীদের ঘিরে অনেক গুজব চলছে। আমরা তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাদের পরিবার ও সমন্বয়কদের নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমরা নিয়ে আসছি। এরই মধ্যে আজ ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়কের পরিবারের সদস্যরা কথা বলেছেন, ওরা ভালো আছে। ওদের পরিবারের সদস্যরা কাল রাতেও এসেছিলেন, আজও এসেছেন। তারাও দেখেছেন ওরা কেমন আছে। তাদের পরিবারের লোকজন গণমাধ্যমে কথাও বলেছেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আমরা মনে করি, যদি কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, আমাদের কাছে আসেন, তাহলে তাদের দেখভাল করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেটাই আমরা করছি।

‘এরই মধ্যে তারা একটা বিবৃতিও দিয়েছে যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে তারা আর নেই। গতকাল রাত থেকে আমরা গুজব ছড়াতে দেখছি তারা স্বেচ্ছায় বিবৃতি দেয়নি। আমরা মনে করি, ডিবি কার্যালয় হচ্ছে মানুষের আস্থার জায়গা। এখানে মানুষকে হেনস্তা করা বা কারও প্রতি অন্যায় আচরণ করা, সেটা কখনোই ডিবি করে না, ভবিষ্যতেও করবে না। মানুষ যখন বিপদে পড়ে আমাদের কাছে আসে বা নিরাপত্তাহীনতায় এখানে আসে বা আমরা নিয়ে আসি, আমরা তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করি।’ যোগ করেন ডিবিপ্রধান।

পরিবারের সদস্যরা তো ডিবিতে আছেন, হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ককে তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেবেন কি না, কারণ গতকালও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, এটা ঠিক নয়, গতকাল রাতেও পরিবারের লোকজন ডিবিতে এসেছেন, দেখা করেছেন। আজও দেখা করেছেন, কথা বলেছেন, সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ওরা যে ভালো আছে সেজন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, আপনারা জানেন, এই কোটাবিরোধী আন্দোলনটা করেছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাদের ভেতরে ঢুকে একটি গোষ্ঠী, জামায়াত-বিএনপি চক্র ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। পুলিশ সদস্যকে ঝুলিয়ে হত্যা, মানুষ হত্যা করেছে। রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় আগুন লাগিয়েছে। আমরা মনে করি, যদি আবার চক্রান্তকারীরা ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করে, তাহলে এই সমন্বয়কদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে। সেজন্য তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের দেখা দরকার।

আর কতদিন তাদের ডিবি হেফাজতে রাখা হবে, জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা তাদের ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। শিগগির তারা পরিবারের কাছে চলে যাবে।

‘ডিবি জোর করে বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছে’

এদিকে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে জোর করে বিবৃতি আদায় করেছে।

বিকেল ৩টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ অভিযোগ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশ থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারসহ ৯ দফা দাবি জানান তারা। ডিবি অফিস থেকে আসা বিবৃতি শিক্ষার্থী সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও জানান তারা।

আরএস