মৎস্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সকল স্তরের কর্মকর্তার সাথে দপ্তরসমূহের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ করণীয় এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে মতবিনিময় করা হয়েছে।
৫ আগস্ট পরবর্তী বর্তমান সরকার কর্তৃক দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলায় কর্মকর্তাদেরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে একাধিক সভা করা হয়েছে। সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে গৃহীতব্য ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। তাছাড়া লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত ৩টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় স্লটার হাউস নির্মাণ কার্যক্রম বাদ দেয়ায় প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে।
বিগত ২৪ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব, মৎস্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক সরেজমিন কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বন্যা উপদ্রুত অঞ্চল পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের খামারিদের সাথে মতবিনিময় করা হয় এবং তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দ্রুত পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করা হয়।
বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন বিষয়ে ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর/সংস্থার প্রধান কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে এবং ২৮ আগস্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তের আলোকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, ঋণের কিস্তি স্থগিত করা, মৎস্য ও পশু খাদ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস, দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রদানের জরুরি ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য যথাক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় জরুরিভিত্তিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ১৮৮ মেট্টিক টন দানাদার পশুখাদ্য, ৬৫ মেট্টিক টন খড় ও ৯৬ মেট্টিক টন সাইলেজ ও ৪৫ হাজার উন্নত জাতের ঘাসের কাটিং বিতরণ করা হয়েছে। জরুরি ওষুধ সরবরাহ ও টিকা প্রদানসহ প্রায় ২০ হাজার গবাদিপশু ও ২ লক্ষাধিক হাঁসমুরগির চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
এ ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে উপদ্রুত এলাকায় পশুখাদ্য ক্রয় বাবদ ৫১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সাথে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে আলোচনাক্রমে ডিম, দুধ, মুরগির দাম কমানোর জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশের মানুষ যাতে সুলভে ইলিশ খেতে পারে সে জন্য রপ্তানি না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ইলিশ মাছের পাচার রোধ ও মূল্য সহনশীল রাখার জন্য আড়তদার, ট্রলার মালিকসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সাথে সভা করা হয়। তাছাড়া ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে মতবিনিময় করে সুলভ মূল্যে ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধ্বান্ত নেয়া হয়।
মাঠ পর্যায়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ নিয়ে কর্মসূচি পরিচালনাকারী বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। মৎস্য ও গবাদি পশুর জাত রক্ষা এবং যারা এই কাজের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন সে সকল প্রান্তিক খামারিদের সমস্যা এবং তা উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সভায় উপস্থাপিত প্রস্তাবসমূহ যাচাই করে প্রকল্প প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বন্যা উপদ্রুত এলাকার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খামারিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য বিভিন্ন এনজিও, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং দপ্তর/সংস্থার প্রধানদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় এনজিওদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও তথ্য প্রদানের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
অধীন দপ্তরসমূহের পদোন্নতিসহ পদায়নের কার্যক্রম গতিশীল করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের ২৫ জন কর্মকর্তাকে সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
সমাপ্ত ও চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে উত্থাপিত দাবিসমূহ বিবেচনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
বন্যা দুর্গতদের সহায়তার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অধীন দপ্তর/সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১ (এক) দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ নব্বই লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার নয়শত চুরাশি টাকার চেক প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে জমা প্রদান করা হয়েছে।
বেলাল/ইএইচ