জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখরের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করবে সংস্থাটি।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ছিল ১৫ হাজার টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক এই এমপির নিজ নামে একটি টয়োটা প্রাডো জিপ রয়েছে, যার মূল্য ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। এছাড়া রয়েছে একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রজার স্টেশন ওয়াগন, যার মূল্য ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৪ একর জমি, নিজ নামে বরাদ্দকৃত রাজউকের ৩ কাঠার প্লট, ১৪ গন্ডা অকৃষি জমি, ৪ কাঠার প্লট এবং চকবাজার সুপার মার্কেটে দোকান রয়েছে। স্ত্রীর নামে পাঁচতলা বাড়ি, ঢাকার কাফরুলের এক হাজার ৮৭২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে।
গাজী হাফিজুর রহমান লিকু সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-২ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হন।
জানা যায়, তার স্ত্রীর নামে রামদিয়া কাশিয়ানীতে মেসার্স রাফি অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ নামে বিভিন্ন মৌজায় কয়েকশ বিঘা জমি ও মোহাম্মদপুর মধুসিটিতে ৬ নম্বর রোডে ৫৮৩ নম্বর বাড়ির এ-৬নং ফ্ল্যাট রয়েছে। ঢাকার উত্তরায় ১৭ নম্বর সেক্টরে ৩ নম্বর রোডে ৪৬ নম্বর সরকারি প্লট অবৈধভাবে বরাদ্দ নেওয়া, গোপালগঞ্জ পৌরসভায় ১০ শতক জমি ক্রয় ও পৈতৃক জমিতে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। তার শ্যালকের নামে ছয়তলা বাড়ি, ১০ তলা বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন, ঢাকার মোহাম্মদপুরে মধুসিটিতে এক বিঘা জমিতে ছয়তলা ভবন নির্মাণ, কুয়াকাটার লাইট হাউজের পাশে ওশান ব্লু রিসোর্ট করেছেন। এছাড়া নামে-বেনামে নিজ ও বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের নামে বিপুল সম্পদ রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে বহু শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, অর্থের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক এবং অন্য কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
এছাড়া এসব নিয়োগে ঠিকাদার কর্তৃক জামানতকৃত টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে রূপালী ব্যাংকে স্থানান্তর করে প্রতি কোটিতে ৫০ হাজার টাকা করে কমিশন নেন। এছাড়া গাড়ির জ্বালানি বাবদ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, তার গ্রামের বাড়ি শেরপুরে ডুপ্লেক্স বাড়ি, ঢাকার ধানমন্ডি ও উত্তরায় একাধিক ফ্ল্যাট, শেরপুরে জমি ক্রয় করেছেন।
আরএস