সকলের মতামত নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার। বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকালে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবালয়ের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে এই কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আগে আমরা বক্তা ছিলাম, এখন আমরা শ্রোতা, আপনারা বলবেন, আমরা শুনবো। আপনাদের কাছ থেকে নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা শুনবো। আমাদের এই কমিশন হলো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। আমাদের ৮ জন সদস্য একজন এখনও নির্ধারণ হয়নি।
বদিউল আলম বলেন, আমরা যে কাজ করার চেষ্টা করবো- আপনাদের কাছ থেকে শুনবো ও আইডিয়া নেবো। বিশেষ করে আপনারা যারা নির্বাচনি বিট কাভার করেন আপনাদের অভিজ্ঞতা ব্যাপক। এই অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে চাই। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে যারা কর্মকর্তা আছেন তাদের কাছে সহায়তা ও অভিজ্ঞতা শুনবো।
নির্বাচনের আইন সংশোধন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেটা করবো নির্বাচনের সঙ্গে সংবিধান যুক্ত আছে, অনেকগুলো আইন যুক্ত আছে, বিধিবিধান যুক্ত আছে, সংবিধানে নির্বাচন সংক্রান্ত যেসব বিধিবিধান আছে সেগুলো পর্যালোচনা করবো। পরে এইসব বিষয়ে কী করা যায় তা আমরা সুপারিশ করবো।
বদিউল আলম বলেন, আমাদের বড় কাজ— জাতীয় নির্বাচনের আরপিওসহ অনেকগুলো আইন পর্যালোচনা করা। প্রত্যেক বাক্য আমরা পর্যালোচনা করবো, মূল্যায়ন করার চেষ্টা করবো, ওইখানে কোনও পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছে কিনা? তারপরেও নির্বাচনের ব্যাপারে অনেকগুলো ফর্ম আছে এইগুলো আমরা খতিয়ে দেখবো কোনও পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছে কিনা।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কার কমিশনের শুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো নির্বাচন কমিশন। এরসঙ্গে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে আরও নিরপেক্ষ ও কার্যকরী করা যায়— এই বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা, আপনাদের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে কিছু সুপারিশ করবো।
নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বড় ইস্যু হলো প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অধিকার ও ভোটের অধিকার নিয়ে কী করা যায়— খতিয়ে দেখা। এখানে আমাদের যে টেকনোলজি এক্সপার্ট আছে সেই খতিয়ে দেখবে। এবং অন্যদের সহায়তা নেওয়া হবে।
নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ ও জাতীয় নির্বাচনে সংরক্ষিত আসন, স্থানীয় নির্বাচনে সংরক্ষিত ব্যবস্থা— এসব বিষয় নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করবো।
বিগত সময়ের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা অতীতের নির্বাচনগুলো খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবো। তার থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবো। এবং আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চেষ্টা করবো। সেইসঙ্গে সকল অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এরপরে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দেবো।
বদিউল আলম বলেন, এইগুলো আমরা প্রাথমিকভাবে চিন্তা করেছি। এটা আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বৈঠক। এর আগেও আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দুটো বৈঠক করেছি। কারণ এই কমিশনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের বার বার বার করে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই কমিশনের কাজের উপর পরবর্তীতে নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি হবে ও নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। আমরা মনে করি, এটা আমাদের উপর পবিত্র দায়িত্ব। এই কমিশনের মাধ্যমে এই নির্বাচন ব্যবস্থা একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে আগামী একটি সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্বটা সততার সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে, যাতে শহীদদের রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারি— সেই লক্ষ্য আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। আপনাদের সকলের সহায়তা লাগবে।
গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা ভাইরাল করার জন্য তথ্য না দিয়ে আলো ছড়ানোর জন্য তথ্য দিয়ে আমাদের সহায়তা করবেন, এর ফলে জাতি উপকৃত হবে।
সর্বশেষ তিনি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের গণমাধ্যমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এবং সবাইকে সহায়তা করার অনুরোধ জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত আইনকানুন, বিধিবিধান সবকিছু আমরা পর্যালোচনা করবো। যাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়ক হয়। অতীতে যা ঘটেছে, উই ওয়ান্ট নিউ বিগেনিং। এখানকার যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তাদেরও আমি বলেছি; অতীতে যা ঘটেছে তা অতীত। আমরা একটা নতুন সম্পর্ক, সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলবো। যাতে আমরা সবাই মিলে একটা নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে পারি। যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারবো। একইসঙ্গে জাতি চিরদিন মনে রাখবে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো, যাতে ভবিষ্যতে যারাই এখানে আসুক, তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। মূলত বাংলাদেশের মালিক এ দেশের নাগরিক। ফলে, দেশের সব মানুষের দায়বদ্ধতা তাদের কাছে। বিভিন্ন কারণে অতীতে হয়ে ওঠেনি, ভবিষ্যতে যাতে ভালোকিছু হয়, সে ব্যাপারে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করবো।
কোনও সংলাপ করার চিন্তা আছে কিনা, এমন প্রশ্নে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা পলিটিক্যাল পার্টির মতামত নেবো। তাদের প্রস্তাব নেবো। বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা সকলের সুপারিশ নেওয়ার চেষ্টা করবো। রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আমরা কীভাবে মতামত নেবো, তা আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করবো।
আরএস