অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হতে পারবেন না যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হতে পারবেন না যারা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম অভিযোগ করে বলেছেন, খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছেন। রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে দেওয়া স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে বিতর্কিত ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণের দাবি তুলেছেন ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবী ছাত্র-জনতা।

গতকাল (সোমবার) দুপুরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক আওয়ামী সুবিধাভোগীদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুর্নবাসনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে সংগঠনটি।

অপরদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনি কাঠামোয় আনতে বা আইনি বৈধতা দিতে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ শিরোনামে অধ্যাদেশ জারি হতে যাচ্ছে।  অধ্যাদেশ অনুসারে উপদেষ্টা হতে গেলে কেমন যোগ্যতা থাকা দরকার এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের কর্মকাণ্ড কী ধরনের উচিত তা উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণ করে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি ওই সরকার গঠনের আদেশ দেন। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে কিছু বলা নেই।

এর আগে এক সময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কথা বলা ছিল। কিন্তু বিগত আওয়ামী শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করা হয়।

বর্তমানে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা এবং প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ বলে কিছু আসলে নেই।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনি কাঠামোয় আনতে বা আইনি বৈধতা দিতেই ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ শিরোনামে অধ্যাদেশ জারি হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন আইনজীবীরা।

‘বাংলাদেশে এখন একটি বিশেষ সরকার কাজ করছে, যেটি গঠিত হয়েছে একটি বিশেষ অবস্থায়,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। এরপর প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী অন্য উপদেষ্টারা নিযুক্ত হবেন।

শপথ গ্রহণের পর সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় উপদেষ্টা পরিষদ রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে এতদিন ২১ জন উপদেষ্টা দায়িত্ব পালন করলেও ধীরে ধীরে সেটির আকার বাড়ছে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের নাগরিক না হলে এবং বয়স ২৫ বছর পূর্ণ না হলে তিনি উপদেষ্টা হতে পারবেন না।

কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলেও তিনি শপথ নিতে পারবেন না।

একইভাবে, ব্যক্তি যদি কোনো আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষিত হন বা দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেয়ে থাকেন, তাহলেও তিনি উপদেষ্টার পদে বসতে পারবেন না।

আর নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্তত দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পার না হলে উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার পদে যেতে পারবেন না।

বাংলাদেশ কোলাবোরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার, ১৯৭২ এর অধীন কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলেও তিনি উপদেষ্টা হতে পারবেন না। অর্থাৎ রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত কেউ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকতে পারবেন না।

পাশাপাশি উপদেষ্টার পদে বসতে হলে ব্যক্তিকে ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না’- মর্মে সম্মতি দিতে হবে।

বিআরইউ