পেকুয়ায় লবণের দরপতন, অর্থনীতিতে স্থবিরতা

নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম
পেকুয়ায় লবণের দরপতন, অর্থনীতিতে স্থবিরতা

কক্সবাজারের পেকুয়ায় দরপতন হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত কাঁচা লবণের। বাজারজাত মোড়কযুক্ত ভোগ্য লবণ ও মাঠে উৎপাদিত কাঁচা লবণের মধ্যে দরের ব্যাপক তারতম্য রয়েছে। যেখানে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত লবণ ৪০ টাকারও বেশি। সেখানে কাঁচা লবণে মাঠে কৃষক দাম পাচ্ছে প্রতি কেজি চার থেকে পাঁচ টাকা। সে হিসেবে বাজারজাতকৃত লবণ এবং মাঠের কাঁচা লবণের দরের ব্যবধান বহুগুণ তারতম্যের মধ্যে আছে।

চলতি লবণ মৌসুমে গেল বছরের লবণ মৌসুমের চেয়ে কাঁচা লবণের মূল্যের চরম দরপতন হয়েছে।

এদিকে পেকুয়াসহ উপকূলজুড়ে রয়েছে লবণ চাষ। শতকরা হিসেবে শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলাতে আশিভাগ লবণ উৎপাদন হয়।

চট্টগ্রাম জেলার আংশিকসহ বাংলাদেশের উপকূল ভাগে অপর বিশ পারসেন্টসহ একশ ভাগ লবণ উৎপাদিত হয়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের সমীক্ষা মতে, চলতি লবণ মৌসুমে প্রায় ৬৮ হাজার ৫ শত ৫ একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। গেল অর্থ বছরে লবণের জাতীয় চাহিদা ছিল প্রায় ২৬ লক্ষ ১০ হাজার মেট্রিকটন। লবণ উৎপাদন কাজে সরাসরি জড়িত চাষি ৪০ হাজার ৬৯৫ জন। পরিবহনসহ এখাতে জড়িত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এ বছরও গেল বছরের চাহিদাকে বলবৎ রাখা হয়। তবে উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ও চাহিদার বিপরীতে একটু এদিক সেদিক হতে পারে।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র এককভাবে কক্সবাজার জেলায় লবণ উৎপাদন জমি রয়েছে ৫৮ হাজার ৬৪৬ একর। পেকুয়া উপজেলায় ১০ হাজার ২৩৫ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে আরো কিছু বেশি লবণ মাঠে উৎপাদিত হয়। লবণ আনদানির প্রয়োজনীয়তা নেই বললে চলে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় কিছু অসাধু চক্র বিদেশ থেকে লবণ আমদানির গোপন মিশনে তোড়জোড় চালায়। তারা লবণ নিয়ে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তাবাবুদের ম্যানেজ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চাহিদাপত্র তৈরি করে থাকে। এমনকি এলসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে লবণ আমদানিও করে।

পেকুয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নে লবণ উৎপাদিত হয়। উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালীসহ তিন ইউনিয়ন লবণ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সদর ইউনিয়নের আংশিক এলাকায়ও লবণ চাষ হয়।

বারবাকিয়া, শিলখালী ইউনিয়নে লবণ উৎপাদনের জমি নেই। টইটংয়ের পশ্চিম অংশে আংশিক এলাকায় লবণ চাষ হচ্ছে। বাঁশখালীসহ চট্টগ্রাম জেলার আংশিক এলাকায় লবণ উৎপাদন হচ্ছে। কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, ঈদগাহ, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার আংশিক স্থানে লবণ উৎপাদন হয়।

সূত্রে জানা গেছে, চলতি লবণ মৌসুমে প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ টাকায়। প্রতিমন কাঁচা লবণের মূল্য দুইশো থেকে আড়াই শত টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত অর্থ বছর প্রতি কেজি কাঁচা লবণের মাঠে দাম ছিল বার থেকে তেরো টাকা। প্রতি মন পাঁচশো থেকে সাড়ে পাঁচশো টাকা। সে হিসেবে গত বছরের চেয়ে এ বছর দরের পতন অর্ধেকের চেয়ে বেশি। গত বছর চল্লিশ শতক জমির আগাম মূল্য ছিল ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। শ্রমিকের মজুরিও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। এ বছর এ দুটিতে বেড়েছে দাম। জমি আগাম বাবত প্রতি কানিতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেড়েছে। বেড়েছে সেচ ও পানির দামও। লবণ উৎপাদনে উপকরণ পলিথিনের দামও বেড়েছে। তবে হ্রাস পেয়েছে কাঁচা লবণের মূল্যের।

এ ব্যাপারে পূর্ব বিলহাসুরা এলাকার লবণ চাষি আলমগীর, রাজাখালী চরিপাড়ার ফরিদুল আলম, মগনামা ফুলতলা এলাকার আজিজুল হক, মটকাভাঙ্গার নুরুল আজিম বলেন, লবণ চাষ নিয়ে আমরা ভালো নেই। এমনি ঘনকোঁয়াশা সহ আবহাওয়ার বৈরীভাব মাঠে লবণ কম দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এর ওপর মরার ওপর খড়ার ঘাঁ। লবণের ন্যায্য দাম নেই।

এদিকে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবণের দাম না থাকায় পেকুয়াসহ স্থানীয় অর্থনীতিতে নীতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এখানকার মানুষ লবণ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে পেকুয়াসহ পুরো উপকূল জুড়ে স্থানীয় অর্থনীতিতে। এখানকার লবণ দেশজ উৎপাদন জিডিপিতেও আংশিক ভূমিকা রাখে।

এ ব্যাপারে লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় কক্সবাজারের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া আমার সংবাদকে বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। জেলার কিছু উপজেলায় চাষিরা আগাম মাঠে নেমেছে। কিছু এলাকায় মাঠ প্রস্তুতি চলছে। বিসিক লবণের দরদাম নির্ধারণ করেনা। মূলত চাষি এবং ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করে লবণের মূল্যে।

ইএইচ