নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৬:২০ পিএম
নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নাগরিক সম্পৃক্ততা, নাগরিকদের তথ্য অধিকার ও নাগরিক পরিষেবা সহজীকরণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ৫ ফেব্রুয়ারি হস্তান্তর করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। মোট ১৭ অধ্যায়ের প্রস্তাবের পঞ্চম অধ্যায়ে রয়েছে- ‘নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে জনপ্রশাসন’ সংস্কারে বিশেষ সুপারিশমালা’ অংশটি।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ডিজিটাল রূপান্তর ও ই-সেবায় জনসেবা ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়াতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। সরকার একাধিক ই-গভর্নমেন্ট সেবা শক্তিশালী করতে পারে। অনলাইনে ট্যাক্স দাখিল, ডিজিটাল জমির রেকর্ড, ইলেকট্রনিক জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিশ্চিত করতে পারে। ই-সেবা সরকারি বা জনসেবার সময় ও খরচ হ্রাস করে দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে এটি খরচ সাশ্রয়ী ও তথ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করতে পারে।

তথ্য অধিকার আইন বিষয় উল্লেখ করে সুপারিশে বলা হয়েছে- নাগরিকরা যাতে সহজে ও অবাধে চাহিদামত সরকারি সেবা সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারে, সে জন্য তথ্য অধিকার আইন পর্যালোচনা ও সংশোধন করা যেতে পারে। ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ ও এফবিসিসিআই বিষয়ে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন থেকে ট্রেড লাইসেন্স, বিদ্যুৎ সংযোগ, পানির লাইন, পরিবেশ ছাড়পত্র পরিষেবার জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসের’ কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর নয়। এমতাবস্থায় আউট-সোর্সিং করে এফবিসিসিআই’র অধিভুক্ত জেলা চেম্বারগুলোকে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’ পাওয়ার আবেদনগুলো প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। নাগরিকদের পাসপোর্ট পাওয়া মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে সুপারিশে বলা হয়, দেশের নাগরিকদের সহজে পাসপোর্ট দেওয়া একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম বাতিল করার জন্য সুপারিশ করা হয়। কোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে আপত্তি থাকলে, তাকে বিমান বন্দরেই যাচাই করা যেতে পারে। তাছাড়া পুলিশের হাতে ফৌজদারী মামলার আসামিদের তালিকা অনলাইনে সহজলভ্য থাকতে পারে। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী নাগরিকদের তথ্য সরবরাহ ও তাদের সমস্যা অভিযোগগুলো শোনা বাধ্যতামুলক করে, সকল সরকারি দপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে বলে সুপারিশে বলা হয়।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য যেমন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রয়েছে, তেমনিভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের নিয়ে একটি করে ‘জেলা নাগরিক কমিটি’ ও ‘উপজেলা নাগরিক কমিটি’ গঠন করার সুপারিশ করা হয়। ওই কমিটিতে ছাত্র প্রতিনিধি রাখতে হবে। স্থানীয় এনজিও ও সামাজিক সংস্থাগুলোকে জন পরিষেবার কাজে সম্পৃক্তকরণ ও তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সেবা প্রদানকারী দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানগলো সেবা প্রত্যাশী বা ভুক্তভোগী নাগরিকদের নিকট হতে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানি বা বিলম্বের অভিযোগ শোনার জন্য হট-লাইন স্থাপন করতে পারে। এই হট লাইন ২৪/৭ বা সরকারি দাপ্তরিক দিনে খোলা রাখা যেতে পারে। কার্যকর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা অনুপস্থিত থাকার কারণে জনসেবার অদক্ষতা ও সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত হয় না। নাগরিকদের মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন ই-গভর্নেন্স উদ্যোগগুলোর কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং জনসেবা প্রদানে বাধা সষ্টি করে। জনসেবা ব্যবস্থার মধ্যে ঘুষ, পক্ষপাতিত্ব ও স্বজনপ্রীতির কারণে সেবা প্রদান প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। জনসেবায় দুর্নীতি বন্ধে সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনসেবা প্রদান নিশ্চিতের জন্য এ সব কার্যক্রমে রাজনৈতিক পক্ষপাত ও দলগত বিবেচনা পরিহার করতে হবে বলে সুপারিশে বলা হয়।

আরএস