জাতিসংঘের প্রতিবেদন

পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ১১:৪০ পিএম
পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) বলছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। তাকে পুলিশ বেপরোয়াভাবে গুলি করেছে।

২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন ও সরকারের বলপ্রয়োগের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে এ কথা বলা হয়েছে এইচসিএইচআর-এর তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে।

তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন করতে গিয়ে ওএইচসিএইচআর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পাওয়া আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি পরীক্ষা করেছে। তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে ছবি ও ভিডিও মিলিয়ে দেখেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই তাতে অংশ নিয়েছিলেন আবু সাইদ। আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বিক্ষোভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে শিক্ষার্থীদের বড় একটি দল জড়ো হওয়ার পর উত্তেজনা বেড়ে যায়।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেন, তখন ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত) সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে গ্যাসের শেল এবং ফাঁকা গুলি ছুড়তে শুরু করে।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, নির্ভরযোগ্য একাধিক ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও ভিডিও চিত্রের ভিত্তিতে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সরাসরি জড়িত ও দায়ী থাকার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য ভাবে উঠে এসেছে।

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ যখন গুলি চালাতে শুরু করে, তখন আবু সাঈদ তার দুই হাত প্রসারিত করেন। তার এক হাতে ছোট একটা লাঠি। আবু সাঈদ ১৪ থেকে ১৫ মিটার দূরে অবস্থানরত পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করেননি।

ওএইচসিএইচআরকে সাক্ষাৎকারে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আবু সাইদ যখন পুলিশের সামনে চিৎকার করে বলছিলেন ‘আমাকে গুলি করো’, তখন দুই পুলিশ সদস্য সরাসরি তার শরীর লক্ষ্য করে শটগান দিয়ে একাধিকবার গুলি করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওএইচসিএইচআরের ফরেনসিক চিকিৎসক আবু সাঈদের মামলার মেডিকেল রেকর্ড পরীক্ষা করেছেন। তাতে তিনি দেখতে পেয়েছেন, আন্তর্জাতিক ফরেনসিক মান অনুযায়ী তার (আবু সাঈদ) ময়নাতদন্ত করা হয়নি। তবে ফরেনসিক বিশ্লেষণে সিদ্ধান্ত হলো আবু সাঈদকে প্রায় ১৪ মিটার দূর থেকে প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটসে ভরা শটগান দিয়ে অন্তত দুবার গুলি করা হয়।

প্রতিবেদনে ভিডিও ফুটেজের ফরেনসিক বিশ্লেষণের সূত্রে বলা হয়, আবু সাঈদের ঘাড়, বুক ও বাহু থেকে রক্তপাত হচ্ছিল। বিশ্লেষণে মাথায় কোনো গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, নথিভুক্ত ক্ষত ও সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ থেকে এই সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়, কমপক্ষে দুবার গুলির ফলে প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটের আঘাতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়। আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে পুলিশ বেপরোয়াভাবে গুলি চালিয়েছে। আবু সাঈদ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন।

ইএইচ