পলাতক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তাদের নেতৃত্ব বিলীন হয়েছে, তবে এখনো তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে— এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
ধ্বংসস্তূপ থেকে পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ
আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে গেছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, "সরকার গঠনের আগে আমার কোনো ধারণাই ছিল না যে আমি হঠাৎ করে একটি দেশের প্রধান হবো। আমি এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম যেখানে সবকিছু ভেঙে পড়েছিল। প্রশাসন অকার্যকর, অর্থনীতি বিপর্যস্ত, গণতন্ত্র লুণ্ঠিত— সবকিছুই নতুন করে গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল।"
তিনি বলেন, "আমার প্রথম কাজ ছিল ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে দেশের আসল কাঠামোকে পুনরুদ্ধার করা, মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে স্বাভাবিক করা এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সঠিক দিকনির্দেশনা তৈরি করা।"
প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা
ফ্যাসিবাদী শাসনের দীর্ঘ ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ যেভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবহার করেছে, তা সংশোধন করা জরুরি বলে মনে করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, অথচ ভোটারদের কোনো ভূমিকা ছিল না। অব্যাহত দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও দমননীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা ইতোমধ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা পুনরুদ্ধার করেছি। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আমাদের প্রতি আস্থা প্রকাশ করছে এবং সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।"
ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে
দেশের ছাত্র আন্দোলন থেকে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে যারা রাজনীতিতে যুক্ত হতে চেয়েছেন, তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তারা এখন সাধারণ নাগরিক হিসেবে রাজনীতি করবেন, যা স্বাভাবিক বিষয়।"
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ও বিচার
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, "দেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। যে কেউ মতপ্রকাশ করতে পারে, রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে। তবে যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। অন্যায় করে পার পাওয়ার সুযোগ কারও নেই।"
ইএইচ