গুম কমিশনের সভাপতি

গুমের শিকার ৩৩০ জনের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম
গুমের শিকার ৩৩০ জনের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে

আজ রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত কথা বলেন কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মইনুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি: বাসস
ঢাকা, ৪ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মইনুল ইসলাম চৌধুরী।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, গুম কমিশন অব ইনকোয়ারিতে আজ পর্যন্ত  ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যার মধ্য থেকে প্রায় ১ হাজারটি অভিযোগ ও তার সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

কমিশনে আগত ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় ৪৫ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।

কমিশনের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবির সেক্টর কমান্ডারদের কাছ থেকে গত ৫ আগস্ট-এর পর ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইন করা ব্যক্তিদের তথ্য চাওয়া হলে বাংলাদেশ পুলিশ ১৪০ জনের তথ্য দিয়েছে। এই তথ্যের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে কোন গুমের শিকার ব্যক্তির নাম এখনও পাওয়া যায়নি। পুলিশ এবং বিজিবির পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রাপ্তি সাপেক্ষে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তবে গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাইয়ের মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ্ নামক গুমের শিকার ব্যক্তিকে চাপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর বর্ডার দিয়ে পুশইন করা হয়েছে বলে আমরা অবগত হয়েছি এবং এ বিষয়ে কমিশনের অনুসন্ধান চলছে।

তিনি বলেন, এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে গত দুই-আড়াই বছরে আটক এক হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশীর নাম ঠিকানাসহ একটি তালিকা পাওয়া গেছে। আরো তথ্য পাওয়া গেলে কমিশনে প্রেরণ করা হবে বলে  লিখিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তালিকায় গুমের শিকার কোনো ব্যক্তির নাম আছে কি না তার অনুসন্ধান চলছে ।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কমিশন অব ইনকোয়ারি এ্যাক্ট-এর ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত গুম সংক্রান্ত অভিযোগসমূহের মধ্য থেকে ৭৪টি অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিজিএফআইর মহাপরিচালক ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এছাড়াও কমিশনের সদস্যরা বিভিন্ন গণসচেতনতা মূলক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ভিকটিম পরিবারসহ অংশীজনদের গুম সংক্রান্ত অপরাধ ও এর দায় সংক্রান্ত বিষয়ে অবহিত করেছেন।

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও ঢাকা, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিএফআই, সিটিটিসি  ও  র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া মাত্রই তা অত্র কমিশন পরিদর্শন করে অপরিবর্তিত রাখার নির্দেশনা প্রদান করে।

গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সভাপতি বলেন,গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসকল সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুম করার অভিযোগ আছে, তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনুসন্ধান করছে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে, গুমের সাথে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত বা প্যানিক স্ট্রিকেন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যে সকল সদস্য গুমের সাথে জড়িত, তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়।  

ৎকারণ ফৌজদারি অপরাধ একটি ব্যক্তিগত দায়, এতে কমিউনিটিকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, সম্পূর্ণ পক্ষপাতমুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করছে বিধায় অত্র কমিশনের কাজে কোন বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হবার কোন কারণ নেই বলে কমিশন মনে করে ।

এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নুর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

আরএস