গুতেরেসকে প্রধান উপদেষ্টা

আপনি আমাদের জন্য অগ্রিম ঈদ নিয়ে এসেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ১২:৩৫ এএম
আপনি আমাদের জন্য অগ্রিম ঈদ নিয়ে এসেছেন

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশে অগ্রিম ঈদ নিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে তাকে অভিবাদন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজন হয়। সেখানেই আন্তোনিও গুতেরেসকে এভাবে অভিবাদন জানান প্রধান উপদেষ্টা। 

জাতিসংঘ মহাসচিবকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এই দেশকে সফল করার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের যে বক্তব্য, তাতে আমি বাকরুদ্ধ। আপনার সফর এই দেশে উৎফুল্লতা নিয়ে এসেছে। রমজান মাস অর্ধেক প্রায় শেষ কিন্তু আপনার সফর আমাদের জন্য অগ্রিম ঈদ বয়ে এনেছে। আপনার এই সফরে এখন থেকে ঈদের আয়োজন শুরু হয়েছে। কারণ আমরা চাচ্ছিলাম, আপনি কী বলতে চাচ্ছেন তা শুনতে। বাংলাদেশের মানুষের আপনার বক্তব্য এবং আপনার সহায়তার প্রতিশ্রুতিতে বেশ খুশি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বিষয় ঘটে গেছে। বাংলাদেশে যারা এসেছেন তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না— কীভাবে কী হলো, কীভাবে তরুণরা রাজপথে নেমে এলো এবং প্রতিবাদ করলো। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য না, বিশ্বের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা বটে। জীবন ছাড়া তাদের কিছুই ছিল না, কোনও অস্ত্র তাদের ছিল না। তারা শুধু বলেছে, আমরা স্বাধীনতা চাই, আমার দেশ ফেরত চাই এবং তারা সেটাই পূরণ করেছে। সেখান থেকেই নতুন বাংলাদেশের সূচনা। আপনি এসেছেন, এর মধ্যে একটা জোর দিয়েছেন। এদেশের মানুষ দেশের প্রয়োজনে যা করার দরকার তা করতে প্রস্তুত, আমাদের শুধু আপনার সহায়তা প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, ভুল তথ্য মোকাবিলায় আপনার সহায়তা দরকার। আমাদেরকে এটি শেষ করে ফেলছে। মানুষ কঠোর পরিশ্রম করছে একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কিন্তু কিছু মানুষের তা পছন্দ না। সুতরাং আমাদেরকে রক্ষা করুন ভুল তথ্য থেকে, বাকিটা আমরা করবো। সেটি আমাদের জন্য কোনও সমস্যা না।

তিনি বলেন, ছাত্রদের ঐক্য এই দেশ গঠন করেছে। পুরো জনগোষ্ঠীর মধ্যে এটি একটি ইউনিক বিষয়। বাংলাদেশিরা অনেক কথা বলেন, অনেক বিষয়ে দ্বিমত করেন, কিন্তু একটি বিষয়ে সবাই একমত যে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই। এই বিষয়ে আমাদের কোনও মত-পার্থক্য নেই। গন্তব্য খুব পরিষ্কার, আমরা এটা করতে চাই এবং আমরা করবো। সেজন্য আপনি এসেছেন আমাদেরকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে। আমরা শুধু আমাদের জন্য বাংলাদেশ গড়তে চাই না, আমরা এটি করতে চাই বিশ্বের জন্য যাতে তারা দেখতে পারে যে ভিন্ন উপায়ে কীভাবে করা যায়। মানুষের জীবন কীভাবে দ্রুত বদলে যেতে পারে। আমাদের জন্য ধীরগতির দিন শেষ। আমরা ধীরগতির পরিবর্তনে আর যাবো না। আমাদের যাত্রায় আপনার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আপনি গতকাল যা করেছেন তাতে সবার মন জয় করেছেন। সবাই আপনাকে ফেরেশতা হিসেবে দেখেছে এবং একটাই বার্তা দিয়েছে যে– তারা ফিরে যেতে চায়। তারা আগামী বছরের ঈদে তাদের নিজ ঘরে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে চায়। তারা দেখাতে চায় যে, এই দুনিয়ায় তারা কোনও প্রকার বোঝা নয়। তারা (রোহিঙ্গারা) বলতে চায়, আমাদের অর্থ খোঁজার প্রয়োজন হয় কেন, আমরা তো ভিক্ষুক না। আমরা পারিবারিক লোক। আমরা নিজেদের দেখভাল নিজেরাই করতে পারি, আমরা বাকি বিশ্বের দেখভাল করতে চাই নিজেদের মতো করে, আমরা কারও ওপর বোঝা না। তারা যে বোঝা না, এই বিশ্বের সম্পদ, তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে চায়– এই বার্তা দিয়েছে। গতকাল রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী , শিশু একটাই বার্তা দিয়েছে – আমাদের সাহায্য করুন নিজ দেশে ফিরে যেতে। তারা বুকে আশা বেঁধে আছে যে তাদের স্বপ্ন সত্যি হবে, আপনাকে ধন্যবাদ তাদের আশা জাগানোর জন্য। এটি তাদের জন্য সেরা ঈদ পুরষ্কার আপনি দিয়েছেন। আমি আশা করি, আপনি আবার আসবেন এবং বারবার আসবেন।

ইফতার অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারসহ অন্যান্য উপদেষ্টারা। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান, ঐকমত্য কমিশনের  সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধান, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ রাজনৈতিক নেতারা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

ইএইচ