দেশের শিক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সামপ্রতিক সময়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত কয়েক দশকে এমন জোরালো বিতর্ক আর কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ে না। এই বিতর্ক অবশ্যই একটি শুভ লক্ষণ। দেশবাসী এই শিক্ষাবিতর্ককে স্বাগত জানিয়েছেন।
লক্ষণীয়, সমাজের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যার যার অবস্থা থেকে এই বিতর্কে অংশ নিচ্ছে। তার মধ্যে খুবই অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদেরা যেমন আছেন, তেমনি আছেন আজকের তরুণ সমাজও, যারা আগামী দিনের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করার পর দক্ষতার অভাবে বেকারত্বের দায় নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
নতুন শিক্ষাক্রমে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি একটি বৃত্তিমূলক বিষয় আবশ্যিকভাবে শিক্ষার্থীকে নিতে হবে। যা তাকে কর্মজগতের জন্য জ্ঞান ও দক্ষতায় পারদর্শী করে গড়ে তুলবে। তাই এটি বর্তমান শিক্ষাক্রমের আরও একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। শিশু বা একজন শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ বিকাশে শিক্ষা আনন্দদায়ক হওয়া উচিত।
এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা যেন আনন্দদায়ক হয় সে বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ফলে এই শিক্ষাক্রমে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সম্পন্ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শিশুর শিক্ষা যদি প্রধানত শ্রেণিকক্ষে সমাপ্ত করা যায় তবে শিশু বিদ্যালয়ের বাইরে বাকিটা সময় পরিবারের সদস্যদের সাথে ও তার সমবয়সি বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা ও অন্যান্য কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবে।
এতে তার বিকাশ প্রক্রিয়া আরও গতিশীল ও ব্যাপ্তিময় হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের নতুন যে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, তা শিক্ষার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ শিক্ষাক্রমকে যুগোপযোগী ও তাৎপর্যময় করেছে, যার অন্যতম একটি হলো শিক্ষার্থীর দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা। বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তর করতে এর কোনো বিকল্প নেই।
এ বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষার্থীদের পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে যেকোনো স্থানের জন্য যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে জ্ঞানের পাশাপাশি দক্ষতা অর্জন অবশ্যম্ভাবী। তাই নিঃসন্দেহে এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এ শিক্ষাক্রমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত, সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক সব শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করা হয়েছে। যা শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিল্প ও আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তিবান্ধব, কর্মোপযোগী এবং সর্বোপরি বিনোদনমূলক করার লক্ষ্যে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করেছে সরকার যা ২০২৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে। নতুন কারিকুলামে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। থাকবে না পিইসি-জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাও।
নতুন কারিকুলামে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে। চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সমাজ ও বিজ্ঞান বিষয়ে শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন করা হবে ৬০ ভাগ।
আর বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৪০ ভাগ। ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম ও শিল্পসংস্কৃতি বিষয়গুলোতেও হবে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন। নম্বর বণ্টনে এই হার কিছুটা পরিবর্তন হবে নবম ও দশম শ্রেণিতে।
এ ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও গণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ ভাগ আর সামষ্টিক বা পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে ৫০ ভাগ। থাকবে না বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষার মতো কোনো বিভাগ বিভাজন। আরও একটু পরিবর্তন এসেছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে।
আবশ্যিক বিষয়গুলোয় শ্রেণিকক্ষে শিখনফলের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে ৩০ ভাগ আর চূড়ান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে ৭০ ভাগ। ৭০ ভাগের ওপরই ছাত্রছাত্রীদের পাবলিক পরীক্ষা দিতে হবে।
ঐচ্ছিক বিষয়গুলোর সব কটিতেই শ্রেণিকক্ষে শিখনফলের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। প্রতিটি বর্ষের শেষে আলাদা চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া হবে। এমনকি জাতীয় দিবসগুলোয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নিয়ম রেখে সপ্তাহে দুই দিন ছুটির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সে হিসাবে মোট ১৮৫ দিন কর্মদিবস। বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে দেশের ৬২টি স্কুল, কারিগরি ও মাদ্রাসায় পাইলটিং কার্যক্রম এখন চলছে।
এই পাইলটিং থেকে ফিডব্যাক নিয়ে চূড়ান্ত ও সঠিক কারিকুলাম প্রণয়ন করা হবে, যা ২০২৩ সাল থেকে কার্যকর হবে। সে লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০২৩ সাল থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে, ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে, ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে এবং ২০২৬ ও ২০২৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হবে। সর্বোপরি, গতানুগতিক পরীক্ষা ও মুখস্থনির্ভর পড়াশোনার পরিবর্তে পারদর্শিতার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে নতুন কারিকুলামে।
শিক্ষার্থীরা সমাজ ও শিক্ষকদের প্রশ্ন করার মাধ্যমে নিজেরা হাতেকলমে শিখবে। পাশাপাশি তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ ও যোগ্য হবে, মানবিকবোধসম্পন্ন শিক্ষার্থী হয়ে উঠবে এবং জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করে শান্তিপূর্ণ সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে উদ্বুদ্ধ হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে প্রথম কুদরত-এ-খুদা কমিশন প্রণীত হয়েছিল।
সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ সালের আগে ৬টি কমিশন কাজ করেছিল। সব কটি কমিশনই নানা আলোচনা ও সমালোচনার মুখে পড়েছিল। বর্তমান কারিকুলাম নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা হবে, এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষা কারিকুলাম একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন-পরিমার্জন হবে ভবিষ্যতেও।
তবে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করতে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক, তা একেবারে নিশ্চিন্তে বলা যায়। কারণ, শিক্ষায় এই সরকারের অনেক অবদান লক্ষণীয়। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় হাজার ১৬০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন।
প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষালাভের জন্য বর্তমান সরকার পর্যায়ক্রমে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন করে চলেছে এবং একের পর এক দৃষ্টিনন্দন একাডেমিক ভবন, মাল্টি মিডিয়া ক্লাসরুম, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবরেটরি। শিক্ষা উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় প্রণীত হয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী বিশ্বমানের এই শিক্ষা কারিকুলাম, যেখানে ছিলেন দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদেরা, সময়ও লেগেছে বেশ।
তাই এখনও সময় লাগবে সফলতা আসতে। তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পদক্ষেপ ছাড়া সফলতার আশা করা ঠিক হবে না। যেমন— একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আলাদা আলাদা পরীক্ষা রাখায় বিষয়গুলো অল্প সময়ে আয়ত্তে আনতে কষ্ট হবে, বিশেষ করে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো। গ্রাম-শহরনির্বিশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো এবং শিক্ষকসমাজ কতটুকু প্রস্তুত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট ও কোচিংয়ের দিকে ধাবিত হয় কি না তা দেখার বিষয়।
এ জন্য মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে হবে। অন্যথায় নতুন কারিকুলাম সাফল্যের মুখ দেখবে না। যুগোপযোগী কারিকুলাম এবং ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শাসন করবেন, আদেশ-উপদেশ দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। প্রযুক্তির অপব্যবহারে আজকাল অনেক শিক্ষার্থী কিশোর গ্যাংয়ের ছত্রচ্ছায়ায় নানা অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছে।
এখানে পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব অপরিসীম এবং কমিটিতে থাকতে হবে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের, কারণ আজকাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকও কমপক্ষে স্নাতক পাস হয়ে থাকেন। উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীর নিচে এখন কোনো শিক্ষক নেই।
তবে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ নামটি শত বছরের পুরোনো ব্রিটিশ আমলে প্রবর্তিত। টিচার্স ট্রেনিং এবং টিচার এডুকেশন এ শব্দ দুটির মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। শিক্ষক তৈরিতে ও শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়নে টিচার এডুকেশন ও টিচার ট্রেনিং দুটি আলাদা ভূমিকা পালন করে থাকে।
বৃহৎ অর্থে টিচার এডুকেশন শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে। উন্নত বিশ্বে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক হতে গেলে একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে টিচার এডুকেশনের কার্যক্রমের আওতায় থাকতে হবে। গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির পর বিভিন্ন মেয়াদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন ফ্যাকাল্টি কিংবা কলেজ অব এডুকেশনের ডিগ্রি থাকতে হবে। কোনো কোনো দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদে ভর্তি হয়ে সমস্ত শিক্ষক শিক্ষাটাই বিদ্যালয়ভিত্তিক করা হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে শিক্ষকদের চাকরির পূর্বশর্ত হিসেবে বিএড, এমএড এখন পর্যন্ত সব আবেদনকারী প্রার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। ফলে শিক্ষকতার জন্য যে কেউ আবেদন করতে পারে। মাধ্যমিক স্তরে ভালো শিক্ষক তৈরি করতে হলে শিক্ষক শিক্ষায় গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে সবাইকে এবং শিক্ষক হতে হলে পূর্বশর্ত হিসেবে বিএড, এমএড ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
এ জন্য টিচার এডুকেশনের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত সেসব শিক্ষককে নিজস্ব পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন, পেডাগজির সঠিক ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় পদ্ধতিতে শেখন-শেখানো কার্যক্রমের মাধ্যমে সঠিক মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মেধাভিত্তিক অবস্থান নির্ণয় করা দরকার। সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোতে শিক্ষকস্বল্পতাও একটি সমস্যা।
শিক্ষকদের বিএড, এমএড কার্যক্রমের বাইরেও নানা প্রশিক্ষণে সময় দিতে হয়। ফলে মূল কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। এটি আমি ঢাকা টিটিসিতে লক্ষ্য করেছি, চার বছর অনার্স, এমএড এবং এক বছর মেয়াদি বিএড কার্যক্রমের পাশাপাশি টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্টের আওতায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টিকিউ-আইয়ের চাকরিকালীন প্রশিক্ষণের ভারে টিটিসির শিক্ষকরা ভারাক্রান্ত। এতে মূল কার্যক্রমের গুণগত মান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হয়ে চলেছে।
এরফলে আইইআরের অনার্স ও মাস্টার্স কার্যক্রমের শিক্ষার্থীদের তুলনায় সরকারি টিটিসির শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার মানে নিচে থেকে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আমার দীর্ঘমেয়াদি নানা প্রস্তাবনার একটি হচ্ছে অবিলম্বে শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হোক দেশকে দক্ষ শিক্ষক প্রশিক্ষক ও শিক্ষক জোগান দেয়ার জন্য।
এতে শিক্ষা ব্যবস্থার নানা নৈরাজ্যের নিরসন ও গুণগত মানের উন্নতি, গবেষণা ইত্যাদি অনেক সহজ হয়ে যাবে। নতুন শিক্ষাক্রমে আমরা আগের সেই অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি। তবে কেন একমুখী থেকে বহুমুখী শিক্ষা চালু হয়েছিল, কেন প্রথম শ্রেণি থেকেই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয় সেটি জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
এছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়নে জোর দেয়া হয়েছে। সাধারণ স্কুলেও কারিগরি ট্রেড যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগ, ল্যাব ও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না দিলে এর সুফল আসবে না। সর্বোপরি নতুন প্রবর্তিত শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীর তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি তাকে একজন দক্ষ, নীতি-নৈতিকতা পূর্ণ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। যা বাংলাদেশের নাগরিকদের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সাথে সমানভাবে এগিয়ে যেতেও পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে। নতুন শিক্ষাক্রমের অনেক ভালো দিক আছে।
তবে আমাদের বাস্তবতার নিরিখে এসব বাস্তবায়নের দিকে কঠোর নজর দিতে হবে। এখন পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন না করলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। কারণ এর আগে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হলেও শিক্ষকদের পর্যাপ্ত দক্ষ করতে না পারায় সেটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি।
তাই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষকদের দক্ষ করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে সারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং এই শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে যেসব বিষয়গুলো জরুরি সেদিকেই বেশি মনোযোগ দিতে হবে, অন্যতায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট