শুভ নববর্ষ: নিউইয়র্ক টু ঢাকা

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৩, ০১:৫৪ পিএম
শুভ নববর্ষ: নিউইয়র্ক টু ঢাকা

শিতাংশু গুহ, ১৬ই এপ্রিল ২০২৩, নিউইয়র্ক (বাংলাদেশ ১৭ই এপ্রিল)।। ম্যানহাটনের টাইম স্কয়ারে এবার প্রথম বর্ণাঢ্য ‘শত কণ্ঠে নববর্ষ বরণ’ অনুষ্ঠানটি শুধু বাঙ্গালী নন, আমেরিকানদের মনে ‘রঙ্গের ছোয়া’ লাগিয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানালেন, তিনি মুগ্ধ, চমৎকৃত। বললেন, বাঙ্গালীদের নববর্ষ এতটা ‘রঙ্গীন ও প্রানোচ্ছল’ তা তিনি জানতেন না। উদ্যোক্তারা ‘শতকণ্ঠ’ বললেও তা হয়ে গেছে ‘হাজারো কণ্ঠ’। কাজের দিন্ এত সকালে এত মানুষ জানান দিয়েছে, সুন্দর, শুভবুদ্ধি’র জয় অনিবার্য। দু’দিন ব্যাপী নববর্ষের অনুষ্ঠান পরদিন জ্যাকসন হাইট্স-এর ডাইভার্সিটি প্লাজায় রং ছড়ায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উৎসাহী মানুষের জোয়ার বইছিলো।

মেয়র এরিখ এডাম্স এলেন বিকাল সাড়ে পাঁচটায়। তিনি এনআরবি’র দেয়া পাঞ্জাবী পড়তে চাইলেন, পারলেন না, শুনেছি পাঞ্জাবীর সর্বোচ্চ সাইজ ছিলো ৪২’’, আমারই হয়নি, মেয়র তো আরো স্বাস্থ্যবান। মেয়র বক্তব্য দিলেন, ফিতা কেঁটে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ উদ্বোধন করলেন। তাঁকে ম্যাগাজিন দেয়া হলো, সাথে এক পোটলা গাইবান্ধার ‘রসমঞ্জরী’। কনসাল জেনারেল ড: মোঃ মুনিরুল ইসলাম উদাত্ত ভাষণ শেষ করলেন ‘জয়বাংলা’ দিয়ে। ম্যাগাজিনটি নামিদামি লেখকের ভারে যথেষ্ট সমবৃদ্ধ, যা সচরাচর নিউইয়র্কে দেখা যায়না। অনুষ্ঠানের আহবায়ক ছিলেন লায়লা হাসান, শেষের দিকে একলা পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কেমন আছেন’? বললেন, ‘ভালো’, হেসে বললাম, এই বয়সে দু’দিন যা নাচলেন! জানালেন, হাসান ইমাম ভাই ভালো আছেন।

অনুষ্ঠানের একবারে শেষে এনআরবি’র বিশ্বজিৎ সাহা প্রতিকূলতা সত্বেও বাঙ্গালীর উৎসব ‘পহেলা বৈশাখ’-এর সফলতায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হচ্ছিলো। এরআগে কমলিনী মুখার্জী চমৎকার পরিবেশনা করেন। পূর্বাহ্নে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা তাঁর স্বভাব-সুলভ চমৎকার পরিবেশনায় সবাইকে আপ্লুত করেন। এসময় একজন আমায় পাশ থেকে বললেন, দাদা দেখলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত কিভাবে এই উন্মুক্ত স্থানেও হৈচৈ শান্ত করে দেয়? বললাম, ঠিক, কিন্তু আপনারা শান্ত হলেও অন্যরা তো অশান্ত, এ সুন্দর অনুষ্ঠান বানচালের কত চেষ্টাই না হয়েছে? যাহোক, মাহবুব’র গানের সাথে সবাই গেয়েছে-নেচেছে।  আড্ডা (অনুপ দাশ ড্যান্স একাডেমী) ও নৃত্যঞ্জলি’র নাচ দর্শক পছন্দ করেছেন।

বাঙ্গালী এমনিতে ঘুমিয়ে থাকে, বাধা পেলে জেগে ওঠে, সম্ভবত: প্রচন্ড বাঁধা এসেছিলো বলেই ‘পহেলা বৈশাখ ১৪৩০’ ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। তবে মামলা হওয়া উচিত হয়নি। মামলাটি করেছেন (বাদী), ‘উই আর দি পিউপিল, আইএনসি। মামলার তারিখ ১১ই এপ্রিল রাতে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পিটিশনটি দায়ের করা হয়। বিবাদী হচ্ছেন, এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড আইএনসি, শাকিল চৌধুরী এবং বিশ্বজিৎ সাহা। মামলার ইনডেক্স নাম্বার: ৭০৭৫৫৭/২০২৩। মামলাটি হয়েছে: সুপ্রিমকোর্ট অফ দি ষ্টেট অফ নিউইয়র্ক, কুইন্স কাউন্টি। ১৩ই এপ্রিল ২০২৩ শুনানী শেষে মহামান্য আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রপাগান্ডা এখনো চলছে। অনুষ্ঠানকে ‘হিন্দু অনুষ্ঠান’ বলে বন্ধ করতে না পেরে ওঁরা এখন উলুধ্বনি ও বৃষ্টির গল্প ফাঁদছে।

বৃষ্টির গল্পটা বলি। আবহাওয়া বলছিলো বিকাল, সন্ধ্যায় বৃষ্টি হতে পারে। হয়নি, বৃষ্টি শুরু জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার ঠিক মধ্যখানে, রাত ১০টার কিছু পর। ‘ঝুপঝুপ’ বৃষ্টি নামে, মূল মাইক বন্ধ হয়ে যায়, বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্যে বাদ্যযন্ত্র সরিয়ে নেয়া হয়, কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বন্ধ হয়নি, আশেপাশে দোকানের ছাউনীতে দাঁড়িয়ে সবাই ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি শেষ করেন। এটি কেউ কাউকে শিখিয়ে দেয়নি, জনতা আপন মনেই, ভালবাসার তাগিদে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছেন। আমিও গেয়েছি। সবশেষে একজন বললেন, দাদা, একাত্তরে ধর্মের নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের বিরোধিতাকারীদের চেহারাটা কিন্তু একই!

লায়লা হাসান, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা যে অনুষ্ঠানের প্রাণ, তোফাজ্জ্বল লিটন, শিবলী, তানভীর, নুরুল বাতেন এবং  আরো অনেকে এ অনুষ্ঠান সফল করতে জীবনপণ করেছিলো, ড. নুরুন্নবী, মুর্শেদ আলম, সরাব সরকার, রথীন্দ্রনাথ রায় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন, অনেকগুলো সংগঠন পারফর্ম করেছেন, সেই অনুষ্ঠান পন্ড করতে কিছু লোকের এটি ‘হিন্দু অনুষ্ঠান’ বলে প্রচারণা দু:খজনক। অনুষ্ঠানে গাইবান্ধা সমিতি বিনে পয়সায় ১হাজার মানুষকে রসমালাই খাইয়েছে। বাংলাদেশ ক্লাবের মাহফুজ ও কিছু ছেলেপেলে ইফতারীর সময় ফ্রী পান্তা-ইলিশ মাছ ভাঁজা, বেগুন ভাঁজা খাইয়েছে। অনুষ্ঠানের ব্যাপক সাফল্যে ঢাকায় একটি কাগজ হেডিং করেছে, ‘শাহবাগ টু টাইম্স স্কয়ার’, আমিও তাই হেডিং দিলাম, ‘নিউইয়র্ক টু ঢাকা’। হ্যাঁ, ঢাকা ও নিউইয়র্ক পহেলা বৈশাখে আবারো জানান দিয়েছে, ‘বাঙ্গালী জেগে আছে’।

[email protected]