বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে সুপেয় পানি প্রাপ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়া সত্বেও ইতোমধ্যে সারাদেশে পানির চরম হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। রাজধানীতে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদার কারণে এর আশেপাশের এলাকাগুলিতে পানির এই সঙ্কট আরো তীব্র আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে নদীতে পানি না থাকা, অতিমাত্রা দূষণ ও খরা মৌসুমে পানির অভাবে কৃষি ও আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয়ে হটলাইনে কিংবা স্বশরীরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। আর ওয়াসা কর্মকর্তারা বলছেন, লোডশোডিংয়ের কারণেও কমেছে পানির উৎপাদন ও সরবরাহ।
বর্তমানে রাজধানীর বাসাবাড়িতে সারা দিনে এক থেকে দুইবারের বেশি পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। সারাদিনে এসব এলাকায় যেটুকুই বা পানি সরবরাহ করা হয় তাও আবার ব্যবহারের অনুপযোগী। ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে চাহিদানুযায়ী পানি উত্তোলন ও সরবরাহ নিশ্চিত করাও সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে কম বৃষ্টিপাত, সেইসঙ্গে জনসংখ্যা ও চাহিদা বাড়ার কারণে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামছে। এজন্য শতাধিক পাম্প বিকল হয়ে পড়েছে। লোডশোডিংয়ের কারণেও পানির উৎপাদন ও সরবরাহ কমছে। পাশাপাশি নতুন পাম্প বসানোরও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রেশনিং করে পাম্প চালাতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে পানির স্থির স্তর ২৬০-২৮০ ফুট নেমেছে আর পানি উঠানো হচ্ছে ৯৫০-১০০০ ফুট নিচ থেকে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, তাদের দৈনিক পানির চাহিদা ২৬৫ কোটি লিটার। এর ৬৪ শতাংশ আসে ভূগর্ভের পানি থেকে। পানির স্তর বেশ নিচে চলে যাওয়ায় প্রায় এক হাজার ফুট নিচ থেকে পানি তুলতে হচ্ছে ঢাকা ওয়াসাকে। রূপগঞ্জের গন্ধবপুর পানি শোধনাগার চালু হলে ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে আসবে বলে আশাবাদী তারা।
এদিকে, মেঘনা নদীর পানি পরিশোধন করে রাজধানীতে সরবরাহ করতে ৯ বছর আগে সোয়া পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল ওয়াসা। তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৫ শতাংশ। এই প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয়েছে আট হাজার কোটি টাকা। শোধনাগার ও পানির লাইনের নির্মাণকাজ শেষে কবে নাগাদ মেঘনা নদীর পানি ঢাকাবাসী পাবে সেটি নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
শুধু তাই নয় পদ্মা নদীর পানি রাজধানীতে সরবরাহ করতে তিন হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। তবে শোধনাগার থেকে পানি রাজধানীতে নিতে সরবরাহ লাইনই স্থাপন করেনি ওয়াসা। এতে শোধনাগারের সক্ষমতার প্রায় ৫০ শতাংশই অব্যবহূত থাকছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে। ফলে নির্ধারিত সময়ে ভূ-উপরিস্থ পানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না ওয়াসা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা শহরে চাহিদার ৮০ শতাংশ পানি ভূর্গভস্থ থেকে মেটায় ওয়াসা। এতে প্রতিবছর পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। তাই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে ওয়াসাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। পদ্মা নদী থেকে ঢাকায় পানি সাপ্লাই দেওয়ার যে প্রকল্পের কাজ চলছে, তা শেষ করতে হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। যা অধিক জরুরি বলে মনে করি।
অপরদিকে পানির চাহিদা পূরণে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি কিনতে চাইলেও সেখানে ঘটছে হাজারো বিড়ম্বনা। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি অধিক লক্ষনিয় উক্ত প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের প্রতি গাড়ী পানির জন্য তাদেরকে বরাদ্দকৃত মূল্যের চাইতেও ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার অধিক ঘুষ না দিলে সময় মতো পানি পাওয়া যায় না, যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। আবার রাজধানীর কোথাও কোথাও পানির যত্রতত্র ব্যবহারও পরিলক্ষিত হচ্ছে। ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনৈতিক ঘুষ দিয়ে কাউকে কাউকে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পানির যত্রতত্র ব্যবহার ও অপচয় করতেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তা যেন দেখার কেউ নেই। ফলে সকল স্থানেই অবৈধ বিষয়গুলো অর্থের জোরে একপ্রকার বৈধতা পাচ্ছে। আর অর্থের জোর যাদের আছে তাদের কাছে এই দেশটি সকল সম্ভাবনার দেশ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। যা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য অধিক কষ্টের ও বেদনার কারণ বলে মনে করি। এই বিষয়গুলোর দিকে দেশের নীতি-নির্ধারক, সচেতন মহল ও মিডিয়াগুলিকে অধিক দৃষ্টি দিতে হবে। বৈষম্য ও শোষণমুক্ত দেশ এবং মানুষের কল্যাণে সকলকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। পানির সুষম বন্টন নিশ্চিত করতে ওয়াসার সীমাহীন দুর্নীতির সকল প্রকার অপতৎপরতা এবং অন্যায়ে বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
যদিও এ কথাটি ঠিক, নিজেদের ও সংশ্লিষ্টদের অনৈতিকতা, অধিক অর্থ জালিয়াতি, প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অধিক দুর্নীতি, স্বজপ্রীতি এবং এই ধরনের কাজে উচ্চমহলের অধিক সংশ্লিষ্টতা, কর্তৃপক্ষের অধিক উদাসিনতা ও চরম অবহেলার কারণে পানির সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও বন্টন ব্যবস্থা ব্যহত হচ্ছে। যদিও সরকার জাতীয় পানি নীতিতে (১৯৯৯) পানিকে একটি পণ্য হিসেবে গণ্য করে পানির উপর কর এবং চাহিদানুযায়ী বাজার মূল্যে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
কিন্তু বিপরিতে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যথাযথ পানি সম্পদ উন্নয়ন, সংরক্ষণ, বন্টন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। যার ভয়াবহ প্রভাব পরছে দেশ ও জনগণের ওপর। সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে শুধুমাত্র বন্যা নিয়ন্ত্রন, নদীর দূর্ষণরোধ, নদী খননের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের বিপরিতে নামমাত্র উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত অর্থের অধের্কের বেশি আত্মসাৎ করা হচ্ছে। ফলে জনগণ তাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী পানির চাহিদা থেকে বারবার বঞ্চিত হচ্ছে। এই খাতে অধিক দুর্নীতির কারণে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন তো নয়ই, বরং তা আরো ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে দেশ ও জাতিতে ধাবিত করছে। প্রতিদিন কোন না কোন জাতীয় পত্রিকায় এ সংক্রান্ত কাজে সংশ্লিষ্টদের অধিক জালিয়াতি ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে।
মূলত: রাজনৈতিক প্রভাব, দলীয় বিবেচনা ও সুশাসনের অভাবে উক্ত খাতের উন্নয়ন দারুণ ভাবে ব্যহত হচ্ছে। যা অধিক উদ্বেগের কারণ বলে মনে করি। তাই জাতীয় পানি নীতি ও জাতীয় পানি উন্নয়ন পরিকল্পনাকে দেশ ও জনগণের স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উক্ত খাতে বিরাজমান সঙ্কট উত্তোরণে সকল প্রকার প্রভাব দূর ও দুর্নীতি ভুলে দেশের মৃতপ্রায় ছোট-বড় নদ-নদী, পানির উৎস, জলাধার, খাল-বিলসহ সকল প্রকার জলাভূমির উন্নয়ন, দূর্ষণরোধ, সংরক্ষণ, পানির সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার দিকে অধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। এই কাজে সরকারের সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব বুঝে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পানির পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা, পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে পানির হিস্যা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান এবং নদ-নদীসহ সকল প্রকার জলাধারে পানি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা স্থির করতে হবে। সেইসঙ্গে পানিসম্পদ রক্ষায় এই খাতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা কাঠামো তৈরির দিকে সরকারকে আরো অধিক দৃষ্টি দিতে হবে। এই খাতে অধিক দক্ষ ও সৎ লোক নিয়োগ করে প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িতদের চিহিৃত করে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যা উক্ত সঙ্কট মোকাবেলায় দেশ ও জনগণের কল্যাণে অধিক জরুরী বলে মনে করি। বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি সরকারের ছত্রছায়ায় এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অর্থের জোরে নদী ভরাট, অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রিসহ নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা বানিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়েছে যা এখনও অব্যহত আছে। প্রতিকারে সংশ্লিষ্টদের অধিক নজরদারী এবং নদীর দখলমুক্ত করে নদীর সীমানা পুনরুদ্ধার করা অধিক জরুরী বলে মনে করি। বলতে দুঃখ হয়, অবৈধ অর্থের কাছে প্রকৃতির আশীর্বাদ এইসব নদ-নদীকে অবলীলায় ধ্বংসের এ হেন কাজে কোথাও কোথাও প্রশাসন নির্বাক থেকেছে। এতে আমাদের জনগণ সোৎসাহে নিজ নিজ হীনস্বার্থে নদী দখলের এই কাজগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ করে আসছে, যা সত্যিই বেদনাদায়ক।
মূলত: সরকারের সংশ্লিষ্টদের অধিক উদাসিনতা, পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে স্থায়ী বিরোধ, স্থানীয় প্রভাবশালী দৌরাত্ম, ও ভূমি দস্যূদের অপতৎপরতা, দোষীদের যথাযথ আইনের আওতায় না আনা ও তাদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়া, আইনী দুর্বলতা, ঘুষবাণিজ্য, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অর্থলিপ্সা এবং অধিক নজরদারীর অভাবে এদেশের এমন অনেক নদ-নদীকে অবলীলায় হত্যা করা হচ্ছে। মূলত: এদেশের কিছু অর্থলোভী অসাধু ব্যক্তিরা নিজেদের স্বার্থে দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থকে বলি দিচ্ছে। বিভিন্ন সরকারের আমলে সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহযোগিতায় তারা অবাধে এই কাজগুলো চালিয়ে গেছে, যা দুঃখজনক। এমন এক অবস্থায় যদিও বর্তমান সরকার ধ্বংস বা মৃতপ্রায় নদ-নদীগুলোকে পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ স্বরূপ- নদ-নদী খনন, নদী শাসন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ভ’মি দৌষুদের তৎপরতা রোধ, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত, পরিবেশ রক্ষা আইনের দুর্বলতা দূরীকরণ, শিল্পকারখানার দুষিত বর্জ্য শোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ পাশাপাশি অধিক জনসচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে, যা ইতিবাচক বলে মনে করি। এখন সরকারের পাশাপাশি পরিবেশবিদ, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন, বিত্তবান, শিক্ষিত যুব সমাজ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোকে সেবার মনোভাব এবং দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এই কাজে সরকারকে সকল প্রকার সহযোগিতা করতে হবে।
যদিও ইদানিং প্রাকৃতিক দূর্যোগ হিসেবে ঘনঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোনের মতো ভয়াবহ বিপর্যয় আমাদেরকে প্রায়ই গ্রাস করছে। এতে দেশ ও জাতি হচ্ছে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও কৃষিখাত হচ্ছে বিপর্যস্ত। অনুরুপ ভাবে ভূগর্ভস্থ পানি অধিক ব্যবহারের ফলেও পানির আর্সেনিক দুষণ জনগণের জীবনের ওপর মারাক্তক প্রভাব ফেলছে। ভয়াবহ পানি দূর্ষণের ফলে দেশে বিভিন্ন স্থানে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটও দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করছে। প্রতিবছর প্রয়োজনীয় নদী শাসন না হওয়ায় অধিক বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে সরকার যে পরিমান অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণবাসনে ব্যয় করছেন সেই পরিমাণ অর্থ দিয়ে সরকার যদি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি নদ-নদীগুলোকে স্থায়ী ভাবে সংরক্ষণ, নদী শাসন বিশেষ করে নদীর দূষণরোধ, নদী খননের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে নদী-নালাকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষায় উদ্যোগী হতো তবে অধিক সুফল পাওয়া যেত। এতে সরকারের অর্থের সাশ্রয়ের পাশাপাশি অবাদি জমির ভাঙনরোধ, কৃষিতে প্রয়োজনীয় সেচ ঘাটতিপূরণ, আর্সেনিক দুষনরোধ, নদী পথে জীবিকা অর্জনকারীদের রক্ষাকরণ, স্বল্প ব্যয়ে নৌপথে পন্য আনা-নেওয়াকরণ, ভবিষ্যতে পানির সঙ্কট মোকাবেলাসহ নদী পথে যোগাযোগ সুরক্ষা পেত। এই বিষয়গুলির প্রতি সংশ্লিষ্টদের অধিক দৃষ্টি দিতে হবে। যদিও ইদানিং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে অধিক তৎপরতা ও নদীর দূষণরোধে কিছু ঝটিকা ও উচ্ছেদ অভিযান পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা ইতিবাচক বলে মনে করি। সরকারের উক্ত কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটিই অধিক প্রত্যাশা করি। এরপরও যদি আমরা প্রকৃতির আশীর্বাদ স্বরুপ পাওয়া এইসব নদ-নদীকে রক্ষায় ব্যর্থ হই তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ এই নদীগুলোই একদিন আমাদের মাঝে বড় ধরনের অভিশাপ হয়ে দেখা দেবে। যার খেশারত তখন সবাইকে দিতে হবে, যা কাম্য নয়। তাই অতিদ্রুত সমস্যা সমাধানে এই খাতের সার্বিক উন্নয়নে পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও বন্টনের জন্য সকল প্রকার অপতৎপরতা রোধ করতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের যেমন সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, ঠিক তেমনি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অধিক আন্তরিক হতে হবে।
কেননা আমরা চাই না আমাদের সামান্য ভুল ও অবহেলায় প্রকৃতির আশীর্বাদস্বরুপ পাওয়া এইসব নদ-নদীগুলো অভিশাপ হয়ে আবার আমাদের মাঝে বিরাজ করুক। আমরা চাই না যে নদ-নদীগুলো তার অপার মহিমা, সেবা ও বুক দিয়ে আমাদেরকে এতো দিন আগলিয়ে রেখেছে তা সামান্য ভুলের কারণে করুণ মৃত হোক। তাই আসুন আমরা সকলে মিলে মৃত নদ-নদীগুলিকে বাঁচাতে একটু দরদি ও সচেতন হই এবং নিজেদেরকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করি। যার যতটুকু সাধ্য আছে তা দিয়েই মৃতপ্রাণ নদীগুলিকে রক্ষায় আত্মনিয়োগ করি। কেবলমাত্র আমাদের সকলের অধিক সচেতনতা, সততা এবং সদিচ্ছাই পারে এদেশের মৃত ও দুষিত নদ-নদীকে রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে। প্রকৃতির এই ঋণ শোধে সকলের ভিতরে সেই সদিচ্ছাটুকু জাগ্রত হবে- এমনটিই প্রত্যাশা করি।
লেখক : কলামিষ্ট ও সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা বিইউএফটি।