সড়কে যানজট

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী করা হউক

মো. আতিকুর রহমান প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৩, ১২:৪৮ পিএম
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী করা হউক

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় নামছে প্রায় ২০০ বিভিন্ন ধরনের নতুন পরিবহন। ২০৩০ সালে ঢাকায় জনসংখ্যা হবে ৩ কোটি। এ প্রেক্ষাপটে যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেয়ার সময় এখনই। রাজধানী ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে হলে সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন জরুরি।

আমাদের যতটুকু সড়কপথ আছে, তাতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানাবিধ পদক্ষেপ নিলে যানজট ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশ্বের বড় বড় শহর, এমনকি হজের সময় মক্কা, মদিনা, অলিম্পিক গেমসহ নানা বড় আসরের সময় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, সে সময় কত সহজেই না যানজট নিয়ন্ত্রণ করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।

চীনে যখন অলিম্পিকের মতো বড় আসর হল, তখন তারা একদিন পরপর জোড়-বেজোড় নম্বরের প্রাইভেট গাড়িগুলো চলাচল করার অনুমতি দিয়ে নতুন কৌশল বের করেছিল। একদিন জোড় সংখ্যার গাড়িগুলো রাস্তায় চলার অনুমতি দিয়েছে তো পরদিন দিয়েছে বেজোড় সংখ্যার গাড়িগুলো।

বিশেষ মুহূর্তগুলোতে বাইরের শহরের গাড়িগুলো শহরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়নি। সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে পত্রিকায় ঘোষণা দেয়া হয়, ফলে দুর্ভোগ হয় না; হয় না যানজটও। জোড়-বেজোড় নম্বরের গাড়িগুলো আমাদের রাজধানীতেও একদিন পরপর চলাচল করতে দেয়া যেতে পারে।

ঢাকা মহানগরীর যানজট, পার্কিং সমস্যা, পরিবেশ দূষণ ও জনদুর্ভোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশু করণীয় হল- পার্কিং চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, বিনা মূল্যে পার্কিং বন্ধ করা এবং অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করা, সর্বত্র জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে পার্কিং ফি নেয়া, পার্কিং থেকে প্রাপ্ত অর্থ পাবলিক পরিবহনের মানোন্নয়নে ব্যয় করা।

ফিলিপাইনে একসময় তীব্র যানজট ছিল। সেখানে স্বাভাবিক চলাচল ছিল কষ্টসাধ্য। যতদূর জানি, সেখানকার ট্রাফিক ব্যবস্থা এখন বেশ নিয়ন্ত্রিত। কীভাবে? ভালো একটি আইন তৈরি হয়েছে ফিলিপাইনে। ফিলিপাইনের আইন অনুসারে সেখানে কোনো গাড়ির লাইসেন্স প্লেটের অক্ষরটা যদি ১ অথবা ২ দিয়ে শেষ হয়, তবে সেই গাড়িটি রাস্তায় সোমবারে থাকার অনুমতি পাবে না। আবার যদি সেটা ৩ বা ৪ দিয়ে শেষ হয়, তাহলে মঙ্গলবার গাড়িটাকে থাকতে হবে ঘরেই।

৫ ও ৬ যাদের গাড়ির লাইসেন্স প্লেটের শেষ অক্ষর, তারা তাদের গাড়ি নিয়ে বেরোবেন না বুধবার। বৃহস্পতিবারে রাস্তায় থাকবে না সেসব গাড়ি- যেগুলোর লাইসেন্স প্লেটের শেষে রয়েছে ৭ ও ৮। আর ৯ ও ০ যাদের গাড়ির লাইসেন্স প্লেটের শেষ নম্বর, তারা বাড়িতেই থাকেন শুক্রবারে। তো কী মনে হয়? ফিলিপাইনের এ আইনটা যে নতুন পরিকল্পনাটা দিল, তা কি কাজ দেবে বাংলাদেশে?

রাজধানীর যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে, অতিরিক্ত প্রাইভেট কারের উপস্থিতি। রাস্তার যানবাহনের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাইভেট কার। কোনো কোনো পরিবারের ৩-৪টি প্রাইভেট কার রয়েছে। কোনো কোনো সময় দেখা যায়, কার ড্রাইভার ও একজন যাত্রী। রোড লাইসেন্স দেয়ার সময় কর্তৃপক্ষ এসব বিবেচনায় আনে বলে মনে হয় না। একটি রিপোর্টে দেখা যায়, রাজধট রাস্তার ৫৪.২ শতাংশ জায়গা দখলে রাখে প্রাইভেট কার।

ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাও যানজটের কারণ। ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যালের তোয়াক্কা না করে একই পয়েন্টে আধাঘণ্টা পর্যন্ত একদিকের যানবাহন আটকে রাখে। অনেক সময় অটো সিগন্যাল বাতিতে যানবাহন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না। সবুজ বাতির বদলে ট্রাফিক পুলিশের হাত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা পুলিশ সার্জেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার নয় কি?

ট্রাফিক বিভাগের হিসাবমতে, সড়কের কম করে হলেও ৩০ শতাংশ বা তারও বেশি দখল হয়ে আছে অবৈধ পার্কিং এবং নানা ধরনের দখলদারদের হাতে। এ ছাড়া ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় প্রধান সড়কেই হেঁটে চলেন নগরবাসী। ফলে যানজটের সঙ্গে আছে জনজট। আরেকটি মজার হিসাবও আছে।

ঢাকায় ১৫ শতাংশ যাত্রী দখল করে আছেন মোট সড়কের ৭০ শতাংশ। কীভাবে? স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট এসটিপির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় কম-বেশি ১৫ শতাংশ যাত্রী প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত করেন। এ প্রাইভেট কারের দখলে থাকে ৭০ শতাংশেরও বেশি রাস্তা। বাকি ৮৫ শতাংশ যাত্রী অন্য কোনো ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করেন। অর্থাৎ তারা গণপরিবহনের মাধ্যমে সড়কের মাত্র ৩০ শতাংশ এলাকা ব্যবহারের সুযোগ পান। এটা দেখবে কে?

যানজটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা সময়ের দাবি। সরকারকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে, যাতে জনগণ এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পায়। এ সমস্যার সমাধানকল্পে কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে, যা বাস্তবায়ন হলে যানজটের সমস্যা থেকে ঢাকাবাসী মুক্তি পেতে পারেন- ১. যেসব দেশের বিভিন্ন শহরে আগে যানজট ছিল, এখন নিয়ন্ত্রিত যানজট; সেসব দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের আমাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে যানজট নিরসনে পরামর্শ নেয়া। লেখক: কলামিষ্ট।

এইচআর