এক সহকর্মী বললেন, ভাই হামলার শিকার হওয়া তরুণদের বেশিরভাগই মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার। রাজনৈতিক মহাসমাবেশ বা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো ইভেন্ট কাভার করার কৌশল তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। তাই অতি আগ্রহ, উত্তেজনায় অনেক বড় ক্ষতি হলো অনেকের। অফিস কি এসব ক্ষতি পুষিয়ে দেবে?
কয়েকটি গণমাধ্যমসহ সিনিয়র সাংবাদিকদের ফেসবুক পোস্ট বলছে, অন্তত ২৭ জন তরুণ সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। ইতোমধ্যে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন সংগঠন থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেকের প্রশ্ন, তরুণ সাংবাদিকরা কেন এভাবে আক্রোশের শিকার হলো?
অতীতের রেকর্ড ভেঙে সাংবাদিকদের এমন অধিকহারে হামলার শিকার হওয়ার ঘটনা ধারাবাহিক উদ্বেগের আরেক দফা বড় চাপ। তবে হামলার কারণটার একমুখী ব্যাখ্যার বাইরে গভীরতা খুঁজে দেখা দরকার। যদিও একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা করছেন। তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা, কারণটা একেবারেই আপেক্ষিক। বিভাজিত দৃষ্টিভঙ্গির ‘ল্যান্ডলেন্স’ দিয়ে না দেখে সাংবাদিকতার উদার দৃষ্টিভঙ্গির ‘ড্রোনলেন্স’ দিয়েই দেখতে হবে ঘটনার পুরো দিগন্ত।
তবে তার আগে মাল্টিমিডিয়ার তরুণ কনটেন্টকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টা অতি গুরুত্বপূর্ণ। শোনা যায়, অফিস বসেরা মোজো রিপোর্টারদের কনটেন্টের ভিউ, হিট আর ভাইরালের টার্গেট দিয়ে দেন। যে টার্গেট পূরণ করতে তরুণরা মারিয়া হয়ে ওঠে। অডিয়েন্স শিকারে স্কুপ, ক্লিকবেইট, স্পাইসি, ভাইরাল কনটেন্ট তৈরির অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামে তারা।
২৮ অক্টোবরের ঝুঁকিপূর্ণ মহাসমাবেশ কাভারে যাওয়া তরুণ সংবাদকর্মীদের মধ্যে এমন একটা মরিয়াপনা ভাব সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ক্লিপগুলোতে দেখা গেছে। নিউজডেস্কে কাজ করা অনেকেই যেখানে ছিলেন রিপোর্টারের ভূমিকায়। যাদের অনেকে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়েছেন। এক্ষেত্রে হঠাৎ রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়া কোনো ইভেন্ট কাভার করার ক্ষেত্রে তরুণদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া দরকার। বুঝতে হবে যে এটা ‘হিরোইজম’ দেখানোর জায়গা নয়। আগে জীবন পরে দায়িত্ব পালন।
মূলত, আমাদের সাংবাদিকতা একেবারে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে গণমাধ্যমগুলো অনেকটা গণবিচ্ছিন্ন। প্রযুক্তিভিত্তিক সাংবাদিকতায় বিভ্রান্তি আর অপচেষ্টারও শেষ নেই। পাবলিক আর পলিটিক্যাল জার্নালিজমের চাপে থাকতে থাকতে হচ্ছে পলিটিক্যাল মেগা ইভেন্টগুলোতে। যে কারণে তাৎক্ষণিক সেল্ফ সেফটির কৌশল প্রয়োগে বিচক্ষণ হতে হবে। প্রয়োজনে সিনিয়র বসদের কাছ থেকে আরও বেশি ব্রিফিং নেয়া জরুরি।
(গণমাধ্যমে সেফটি ফার্স্ট: ২৯ অক্টোবর, ২০২৩)