আজ শব্দবোমা, অগ্নিবৃষ্টির রাত

নিয়ন মতিয়ুল প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩, ১২:৪০ পিএম
আজ শব্দবোমা, অগ্নিবৃষ্টির রাত

ছেলেবেলায় রূপকথার দৈত্য-দানবের কাহিনি পড়ে, শুনে বড় হয়েছি আমরা। আর আজকের শিশুরা সায়েন্স ফিকশনে ভিনগ্রহের দানবদের গল্প পড়ে। ভিডিও গেমে হিংস্র মানবদের রক্তের হলি খেলা দেখে। নিজেরাও ভার্চুয়াল খুনোখুনিতে মেতে ওঠে। কল্পনার এসব হিংস্র দানবরা আসলে আমাদের মষ্কিস্কের খাঁচায় বন্দি।

সেই প্রাচীনকালে অরণ্যচারী মানুষেরা যে গোত্রে গোত্রে সংঘাতে রক্তের খেলায় মেতে উঠতো, সময়ের বিবর্তনে সামন্তযুগে এসে রাজ্য দখল নিয়ে রাজারা যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়াতো সেসবই আমাদের মস্তিষ্কের কোষে কোষে গেঁথে গেছে। আধুনিক পারমাণবিক যুগে এসে বিশ্বযুদ্ধ বা খণ্ডযুদ্ধে কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করে রাষ্ট্রনায়করূপী সেই দানবরাই। মানবসভ্যতার ইতিহাস মানেই খুন, রক্ত আর হিংস্রতা। সভ্যতা আসলে প্রহসন। যেখানে দানবই যুগে যুগে নীরব দেবতার আসন পেয়েছে।

শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে বহুমুখী ধর্মীয় শাসন, মহান সংবিধান রচনা, কোটি কোটি আইন প্রণয়ন আর বিবেকের খাঁচায় বন্দি করে হিংস্র দানবদের আমরা নীরবে, অতি যত্নে মস্কিষ্কে বহন করে চলেছি। এসব দানবকে নির্মূল আর নিয়ন্ত্রণে যে শিক্ষা, জ্ঞান আর মূল্যবোধের চর্চা প্রয়োজন তা থেকে আমরা বহু দূরে। তাই সুযোগ পেলেই মস্কিষ্কের হিংস্র দানবরা খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে পড়ে।

কোনো দেশ যখন ধনী হয় সে দেশে ধনীদের মস্কিষ্কের খাঁচা ভঙ্গুর হতে থাকে। সমাজে ধন বৈষম্য বেড়ে গেলে ধনীরাই এক একজন দানবে পরিণত হয়। ধর্ম, সংবিধান, আইন, বিবেকের বাঁধন ছিঁড়ে ফেলে তারা। আজ থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিশ্বজুড়েই দানবরা খাঁচা ভেঙে বেরুবে। বাংলাদেশের কিছু সংখ্যালঘু দানবও বেরিয়ে পড়বে মস্কিষ্কের খাঁচা টপকে।

বিশেষ করে রাজধানীর ভবনগুলোর ছাদে মস্কিষ্কের তরুণ দানবরা আজ শব্দবোমা আর অগ্নিবৃষ্টিতে মাতবে। প্রবীণ, অসুস্থ বা বয়স্ক নারী-পুরুষ, শিশু, পশুপাখিদের ভীত সন্ত্রস্ত করে শব্দবোমা ফাটাবে। অগ্নিকাণ্ডের বিপদ নিয়ে ঢাকার আকাশে হাজার হাজার ফানুস উড়বে। আগুন লাগবে, সাইরেন বাজিয়ে দমকল বাহিনী আসবে। ফানুস উড়ানো বা আশতবাজি ফোটানোর নিষেধাজ্ঞা ছাপিয়ে আজ একেবারে উৎসবের নগরীতে পরিণত হবে ‘নিয়ম ভাঙার স্বর্গনগরী’ ঢাকা! 

(নববর্ষের শুভেচ্ছা: ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩। এলিফেন্ট রোড, ঢাকা)

লেখক : সাংবাদিক