‘ঈদ আসে ঈদ যায়’ কিন্তু বাবা আসে না

মিরাজ উদ্দিন প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৪, ০১:০০ এএম
‘ঈদ আসে ঈদ যায়’ কিন্তু বাবা আসে না

আমি বলতে লজ্জা বোধ করি না যে আমার দেখা কোনো মানুষই আমার বাবার সমান ছিল না এবং আমি অন্য কোনো মানুষকে এতটা ভালোবাসিনি’ —হেডি লামার।

বাবা দুটি অক্ষরের একটি শব্দ হলোও এর বিশাল মহত্ত্ব রয়েছে। সন্তানের সুখের জন্য নিজের জীবনের সুখ শান্তি বিলিয়ে দেন তিনি। বাবা হলো পরিবারের বটবৃক্ষ। অধিকাংশ বাবারা সুখের সময় নিষ্ঠুর এই পৃথিবী ছেড়ে পরকালে পাড়ি জমানো। সন্তান জন্মের পর থেকে মা আর বাবা থেকে শিক্ষা অর্জন করেন।আর বাস্তবিক শিক্ষা দিতে পরেন বাবা। কারণ আমি কখনো আমার বাবার আগে সালাম দিতে পারি নাই। এইজন্য জর্জ হারবার্ট বলেছেন- ‍‍`একজন বাবা ১০০ জন শিক্ষকের সমান’

বাবার প্রতি আমার ভালোবাসা কেমন ছিল সেটা লিখে প্রকাশ করার মতো না তবুও বলতে হয়। বাবা তখন চট্টগ্রামে থাকতেন,ঈদে কম আসা হতো, বেশির ভাগ ঈদের কয়েকদিন পরে দিন আসতেন বাড়িতে। একবার রমজানের ঈদে বাড়িতে আসলেন। আমরা দুই ভাই অনেক খুশি বাবার সাথে বাজারে যাবো।

বাবা নিয়ে গেলেন বাজারে দুই ভাইকে দুটি ইলেকট্রনিকস গাড়ি কিনে দিলেন। যা সেসময় ছিল অনেকের সন্তানের স্বপ্ন,দামি গাড়ি। খুশিতে আমরা দুই ভাই আত্মহারা। এইছাড়া বাবা চট্টগ্রাম থেকে আসার সময় বিভিন্ন ধরনের খেলনা নিয়ে আসতেন।আমার খেলনা দেখার জন্য আশপাশের বাচ্চারা ছুটে আসতো।

আমার বাবা ছিলেন সাদাসিধা নৈতিকতার একজন মানুষ। আমি একজন আদর্শ বন্ধু পেয়েছিলাম,সবকিছু শেয়ার করতাম, বাবা ২০১১ সালে বিদেশে যায় আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। করোনার সময় দেশে চলে আসে আবার ২২ সালে বিদেশে পাড়ি জমায়, একদিন আমাকে কল দিয়ে বলে তুমি আমাকে ভালোবাসো না তোমার মা কে? বললাম বাবা তোমাকে আমি ভিষন ভালোবাসি। ভিডিও কলে বাবার সেই মুগ্ধ সেই হাসি আজও আমার চোখের সামনে ভাসছে।

ঈদ আসে ঈদ যায় কিন্তু বাবা আসে না। ঈদের নামাজ পড়তে জায়নামাজ নিয়ে সন্তানকে নিয়ে ঈদগাহ ময়দানে যায়।নতুন জামাকাপড় কিংবা অন্য কিছু নেওয়ার জন্য বলার লোকটি আজ আর নাই।

আজ বিশ্ব বাবা দিবস। জুন মাসের তৃতীয় রোববার প্রতি বছর বিশ্বের ১১১ দেশে পালিত হয় বাবা দিবস। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই দিবসটি পালন করা শুরু হয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সেপ্টেম্বরের প্রথম রোববার বাবা দিবস পালন করে থাকে। প্রতিটি পরিবারই নিজেদের মতো করে পালন করবে দিনটি। সম্মান জানাবে তাদের বাবাকে।

বাবা দিবসের শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চার্চের মাধ্যমে দিনটির প্রচলন। অন্যরা বলেন, ওয়াশিংটনের ভ্যাংকুভারে প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়। তবে সাধারণ মত, বাবা দিবসের প্রবক্তা সোনার স্মার্ট ডোড। যখন তার বয়স ১৬, তখন তার মা ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। পরিবারে সোনারই ছিলেন একমাত্র কন্যা। পূর্ব ওয়াশিংটনের এক গ্রামের ফার্মে এর পর থেকে ডোডের বাবা নবজাতকসহ পাঁচটি সন্তান মানুষ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। সোনার বড় হওয়ার পর অনুভব করলেন, ছয়টি সন্তান একা একা মানুষ করতে কী ভীষণ পরিশ্রমই না তার বাবাকে করতে হয়েছে।

উইলিয়াম তার মেয়ের চোখে ছিলেন সাহসী, নিঃস্বার্থ একজন ভালো বাবা, যিনি সন্তানদের জন্য নিজের সব সুখ-শখ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সোনার স্মার্ট বিয়ে করেন জন ব্রোস ডোডকে। তাদের সন্তান জ্যাক ডোড জন্মের কিছুকাল পরে সোনারের স্বামীও মারা যান। এ অবস্থায় বাবা আর মেয়েতে মিলেই পুরো জীবন পার করে দেন তারা। 
বাবার প্রতি সম্মান জানাতে ‘বাবা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সোনারের চিন্তায় আসে ১৯০৯ সালে। ‘মা দিবস’-এর অনুষ্ঠানে সে বছর চার্চে যান সোনার ডোড। অনুষ্ঠানে এসেই তার মনে হয় মা দিবসের মতো বাবাদের জন্যও একটি দিবস করা প্রয়োজন, যেখানে মায়েদের মতো বাবাদেরও সম্মান জানানো হবে। প্রকাশ করা হবে ভালোবাসা। যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেন মন্ত্রিসভার কাছে তিনি তার পিতার জন্মদিন ৫ জুনকে বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠান।

তার প্রস্তাবের প্রশংসা করলেও মন্ত্রিসভা ৫ জুনকে বাবা দিবস ঘোষণা করতে রাজি হয়নি। তারা জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।

মিরাজ/ইলিয়াস