সাবেক সরকার সবকিছুই খারাপ করেছে তা নয়। ভাল কাজের উদাহরণ রয়েছে অনেক। তবে উন্নয়ন আর লুটপাট চলেছে সমানতালে। কিন্তু ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য যা যা করার দরকার তার সবকিছুই তারা করেছে ন্যাক্কারজনকভাবে। উলঙ্গ পদক্ষেপ হিসেবে বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে দেয়া হয় গণতন্ত্র।
পর্যায়ক্রমে, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী রক্ষী বাহিনীর ন্যায় ব্যবহৃত হয়েছে, আইন-আদালত চলেছে আঙুলের ইশারায়, প্রশাসন হয়েছে একচোখা, সৃষ্টি হয়েছে ‘আয়নাঘর’ নামক গুমখানা, রচিত হয়েছে এক বিভেদের বাংলাদেশ, নির্বাসিত হয়েছে গণতন্ত্র। সমালোচনা আর ভিন্ন বা স্বতন্ত্রমতকে দেখা হয়েছে শত্রু হিসেবে। সৃষ্টি করা হয়েছে এক গভীরতম ভয়ের আবহ। মিথ্যাচার আর নানা হঠকারিতার কারণে সরকারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস আস্থা তলানিতে ঠেকেছে। যা প্রতিফলিত হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সফল সমাপ্তির মাধ্যমে। কল্পনাতীতভাবে সাবেক সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়েই পালাতে হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবে প্রাণ ঝরেছে অনেক যার নির্দিষ্ট সংখ্যা এখনো অজানা। তবে শহীদ আবু সাঈদকে আমি দেখি এই বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে। যারা এই বিপ্লবে শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা।
ঘটনা পরবর্তী সময়ে দেশে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছিলো যা এখনো বিক্ষিপ্তভাবে চলমান তা কোন কোন যুক্তিতেই সমর্থন করিনা। আপদকালীন এই সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। আশা রাখি এই সরকার সারাদেশে প্রতিহিংসার যে ক্ষতচিহ্ন সৃষ্টি হয়েছে তা আন্তরিক ভালবাসা দিয়ে মুছে দেওয়ার উদ্যোগ নিবেন। দেশকে একটি হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত, ন্যায়- ন্যায্যের, বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক ধারার প্রথম ধাপ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে ইতিহাসের বীরোচিত সর্বগ্রহণীয় অংশ হবেন।
পরিশেষে, একটি দলের প্রধান হিসেবে না হউক, সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে না হউক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না হউক, দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক হিসেবে কৃতজ্ঞচিত্তে বঙ্গবন্ধুকে যেন স্বাধীন বাংলার প্রতীক হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় রাখা হয় ।
কার্যত সফল হউক ৫ই আগস্ট। আগামীর বাংলাদেশ হউক নাগরিকের নিরাপদ বাংলাদেশ।
লেখকঃ
সাংবাদিক মো. জোবায়ের হোসেন
সদস্য প্রেসক্লাব মির্জাপুর, টাঙ্গাইল।