বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক `আপোষহীন` নেতৃত্বের নাম।রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত তিনি কোন আপস করেন নি।তিনি ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আটক হন। আপস না করে আইনি লড়াই চালিয়ে ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন।বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির এই বিশেষ দিনে `খালেদা জিয়া` সম্পর্কে বিএনপি বিটে সাংবাদিকতা করা গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এই লেখাটি আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
১)সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শ :
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর আওয়ামী লীগের সীমাহীন দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কারণে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু হয়। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের `বাঙালি জাতীয়তাবাদ` এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ধারণ করে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় বিএনপির। বিএনপি`র পুরো নাম হচ্ছে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (Bangladesh Nationalist party )। যার বাংলা অনুবাদ হচ্ছে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’।বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ `বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ` আদালত কর্তৃক স্বীকৃতি পায়।
১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে।বিরোধীদলের আসনে বসে আওয়ামী লীগ।
২)রাজনীতিতে আবির্ভাব প্রক্রিয়া :
আওয়ামী লীগে নানা কোন্দল,বিভাজন সৃষ্টি হলে ১৯৮১ সালে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা কে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। দলের প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ না করে সরাসরি রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটে শেখ হাসিনার।
অপরদিকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান শহীদ হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের আহ্বানে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন।১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপি পূর্ণ বিকাশিত হয়।রাজনীতির ধারাবাহিক পর্যায় অতিক্রম করে বেগম খালেদা জিয়া দলের শীর্ষস্থানে আসীন হন।
৩) আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যেভাবে হেরে যান শেখ হাসিনা :
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩ সালের বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়।বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন। একই সময় বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পনেরো দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচির সূত্রপাত করেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে।
সামরিক শাসক হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ কে তাঁর ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তাই ১৯৮৬ সালের ১৯ মার্চ বুধবার বিএনপি, আওয়ামী লীগ সহ সকল দল ঘোষণা দেন যে,তারা এরশাদের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না। সেদিন শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে ঘোষণা দেন যে, এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে, তারা হবে জাতীয় বেইমান।"
এরশাদের ফাঁদে পা দিয়ে শেখ হাসিনা পরদিন ঢাকায় এসে চট্টগ্রামে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে সরে আসেন। ২১ মার্চ শুক্রবার হঠাৎ তিনি ঘোষণা দিলেন যে, আওয়ামী লীগ এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে।
আওয়ামী লীগ মনে করেছিল বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলে নির্বাচনের বাইরে রাখতে পারলে বিএনপি একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগ জোট গঠন করে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করলে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে।বিজয়ী হতে না পারলে এরশাদের সাথে সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করবে। তাও না পারলে বিরোধীদলের `নেত্রী` হিসেবে জাতীয় সংসদে ভূমিকা পালন করবে।( বিস্তারিত বিবিসির সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের লেখা বই : `এক জীবন, এক ইতিহাস` পৃষ্ঠা ২৩২)।
পরদিন ২২ মার্চ শনিবার বিএনপি,বিএনপি`র অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলো এরশাদের অধীনে শেখ হাসিনার নির্বাচনে যাওয়া কে `পাতানো খেলা` অবহিত করে দেশের মানুষের মতামত নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি নিয়ে আপস করেনি।
নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগ তাদের প্রত্যাশিত আসন পায়নি।দলের নেতারা এই নির্বাচনকে `পুকুর চুরি`, `দীঘি চুরি` বলে সমালোচনা করেন।আওয়ামী লীগ একই সঙ্গে `ঐক্যমত` ভঙ্গ করে নির্বাচনের অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে জনগণের কাছে `জাতীয় মুনাফেক পার্টি` হিসেবে পরিচিতি পায়।
নির্বাচনে পরে শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, তিনি সংসদের বৈঠকে যোগ দেবেন না। কিন্তু পরে আবারো হঠাৎ তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সংসদে যোগদান করেন। এ সময় গুজব রটেছিল যে, শেখ হাসিনাকে এরশাদ `লং ড্রাইভ` এ নিয়ে যান। তারপর সেখানে রাজনৈতিক মতৈক্যে পৌঁছান। (বিস্তারিত সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের লেখা বই : এক জীবন, এক ইতিহাস , পৃষ্ঠা-২৩২)।
নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করায় বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া "এরশাদ হটাও" শীর্ষক এক দফার আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। তারপর পুনরায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপক্রম হয়।
শেখ হাসিনা তখনও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে মাঠে না এসে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। যেমন-১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘির মাঠে শেখ হাসিনার উপর হামলার প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।প্রতিবাদ সমাবেশে কথা দিয়েও শেখ হাসিনা যাননি। সমাবেশ শেষে ৪০ হাজার লোকের একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।(বিস্তারিত সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের লেখা বই : এক জীবন, এক ইতিহাস , পৃষ্ঠা-২৩৮)।
তখন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রদল জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ছাত্রদল এককভাবে ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হলে `ছাত্র আন্দোলন` ছাত্রদলের হাতে চলে যায়। ছাত্রসমাজের দাবির মুখে বিএনপি,আওয়ামী লীগ সহ `রাজনৈতিক ঐক্য` তৈরি হলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন হয়।
৪)নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে হেরেছেন শেখ হাসিনা :
অবশেষে দীর্ঘ ৯ বছর অবিরাম, নিরলস ও আপোসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসন, ১৯ ৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসন, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে বিজয় লাভ করেন। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংসদ নির্বাচনের নতুন আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি ৩টির বেশি আসনে নির্বাচন করতে পারে নি। ফলে বেগম খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ তিনটি আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। চট্টগ্রাম,ফেনী, লক্ষ্মীপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া -- থেকে শুরু করে তিনি জীবনে যেখানে নির্বাচন করেছেন, সেখানেই মানুষের ভালোবাসায় ব্যালট বিপ্লবে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
৫)বেগম খালেদা জিয়ার যে চ্যালেঞ্জের জবাব এখনো দিতে পারেন নি শেখ হাসিনা :
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাত থেকে বিশ (২০) হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে মর্মে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে আসছিল।বিএনপির পক্ষ থেকে এই অভিযোগের পাল্টা জবাব না দেওয়ার কারণে বিএনপির নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের দোদুল্যমান অবস্থা বিরাজ করতো।তারা না পারতো প্রতিবাদ করতে, না পারতো সইতে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, আওয়ামী লীগ সমর্থক সুশীল সমাজ, ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ সহ সবাই বিএনপি`র বিরুদ্ধে বিষাদগার করার জন্য এই হাতিয়ারটি ব্যবহার করতো।
সর্বশেষ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই বছর ১ মে শুক্রবার বিকেলে পল্টন মোড়ে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগের জনসভায় শেখ হাসিনা প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, “বিদ্যুৎ ও পানি সমস্যা কারা তৈরি করেছিল?
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে ৩৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি।জোট সরকার ক্ষমতায় এসে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি। বরং এ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তা লুটপাট করা হয়েছে। এ টাকা কোথায় গেল? বিস্তারিত :দৈনিক যুগান্তর এবং প্রথম আলো পত্রিকা ৩ মে,২০০৯)।
টেলিভিশন চ্যানেলে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার একটি রাজনৈতিক `রুচি` ছিল। আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার বক্তব্যের জবাব তিনি দিতেন না। শুধুমাত্র শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাব তিনি দিতেন। এতদিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই অভিযোগ করলেও তিনি কোন জবাব দেননি।
পরদিন ২ মে শনিবার বিকেলে পল্টনের মোড়ে একই স্থানে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের শ্রমিক সমাবেশে শেখ হাসিনার মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেন খালেদা জিয়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন বলে অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া বলেন, “ আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই, আপনি প্রমাণ করুন যে বিএনপির পাঁচ বছরে বিদ্যুতে ২০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বিএনপি`র পাঁচ বছরে বিদ্যুতের জন্য মোট বরাদ্দই ছিল সাড়ে ১৩ (তেরো) হাজার কোটি টাকা। তাহলে ২০ হাজার কোটি টাকা লুট হয় কী করে? এর মধ্যে নয় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন- ভাতায় এবং বাকি টাকা উন্নয়ন ও উৎপাদনে।"
বেগম খালেদা জিয়া আরো বলেন, "বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। সত্যিকার দুর্নীতির কথা বলতে গেলে বলতে হবে এটি শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগের আমলে।এটি আমার নয়, টিআইবির কথা।"
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "আপনি তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করুন।২০০০ সালে দেশে ১৭ হাজার ১৯২ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে।আর আমরা ২০০৫ সালে কমিয়ে ৫২৬ কোটি টাকায় এনেছি"।
(বিস্তারিত: দৈনিক যুগান্তর এবং প্রথম আলো পত্রিকা ৩ মে,২০০৯)।
সেই ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল এখনো পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার চ্যালেঞ্জের জবাব শেখ হাসিনা দিতে পারেন নি।
পহেলা মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে পরদিন ২ মে বাংলাদেশে কোন পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। তাই ৩ মে দৈনিক যুগান্তর এবং প্রথম আলো পত্রিকা সহ অধিকাংশ পত্রিকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছাপিয়েছেন। যে কোনো ব্যক্তি চাইলে পুরোনো পত্রিকা ঘেটে নিউজটি দেখতে পারেন।
বিগত ১৮টি বছর ধরে বিএনপি,জিয়া পরিবার, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘সংবাদ’ প্রকাশিত হয়েছে। ফলে তরুণ প্রজন্ম এখনো বিএনপি সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। তাই তরুণ প্রজন্মের ভুল ভাঙার জন্য বিএনপির সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রচার করা অত্যন্ত জরুরি।
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক `আপোষহীন` নেতৃত্বের নাম। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত তিনি কোন আপস করেন নি।তিনি ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আটক হন। আপস না করে আইনি লড়াই চালিয়ে ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন।বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির এই বিশেষ দিনে `খালেদা জিয়া` সম্পর্কে বিএনপি বিটে সাংবাদিকতা করা গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এই লেখাটি আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
টেলিভিশন চ্যানেলে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার একটি রাজনৈতিক `রুচি` ছিল। আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার বক্তব্যের জবাব তিনি দিতেন না। শুধুমাত্র শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাব তিনি দিতেন। এতদিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই অভিযোগ করলেও তিনি কোন জবাব দেননি।
পরদিন ২ মে শনিবার বিকেলে পল্টনের মোড়ে একই স্থানে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের শ্রমিক সমাবেশে শেখ হাসিনার মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেন খালেদা জিয়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন বলে অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া বলেন, “ আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই, আপনি প্রমাণ করুন যে বিএনপির পাঁচ বছরে বিদ্যুতে ২০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বিএনপি`র পাঁচ বছরে বিদ্যুতের জন্য মোট বরাদ্দই ছিল সাড়ে ১৩ (তেরো) হাজার কোটি টাকা। তাহলে ২০ হাজার কোটি টাকা লুট হয় কী করে? এর মধ্যে নয় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন- ভাতায় এবং বাকি টাকা উন্নয়ন ও উৎপাদনে।"
বেগম খালেদা জিয়া আরো বলেন, "বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। সত্যিকার দুর্নীতির কথা বলতে গেলে বলতে হবে এটি শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগের আমলে।এটি আমার নয়, টিআইবির কথা।"
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "আপনি তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করুন।২০০০ সালে দেশে ১৭ হাজার ১৯২ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে।আর আমরা ২০০৫ সালে কমিয়ে ৫২৬ কোটি টাকায় এনেছি"।
(বিস্তারিত: দৈনিক যুগান্তর এবং প্রথম আলো পত্রিকা ৩ মে,২০০৯)।
সেই ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল এখনো পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার চ্যালেঞ্জের জবাব শেখ হাসিনা দিতে পারেন নি।
পহেলা মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে পরদিন ২ মে বাংলাদেশে কোন পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি।তাই ৩ মে দৈনিক যুগান্তর এবং প্রথম আলো পত্রিকা সহ অধিকাংশ পত্রিকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছাপিয়েছেন। যেকোনো ব্যক্তি চাইলে পুরোনো পত্রিকা ঘেটে নিউজটি দেখতে পারেন।
বিগত ১৮টি বছর ধরে বিএনপি,জিয়া পরিবার, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে
‘সংবাদ’ প্রকাশিত হয়েছে। ফলে তরুণ প্রজন্ম এখনো বিএনপি সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। তাই তরুণ প্রজন্মের ভুল ভাঙার জন্য বিএনপির সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রচার করা অত্যন্ত জরুরি।
লেখক : গণমাধ্যম কর্মী ও ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।