রাজধানীর ‘সড়ক তুমি কার?’ এমন প্রশ্ন নগরবাসীর। ঢাকার প্রায় সব সড়কই অবৈধ দখলদারদের কব্জায়। যে যেভাবে পাড়ছে সে সেভাবে দখল করে নিচ্ছে। যেন এই সড়কের কোনো বাবা-মা নেই। গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থানেই রাস্তার পাশের ফুটপাত দখল করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এরা নানা ধরনের দোকান খুলে বসেছেন। চালাচ্ছেন কেনাকাটা। কেউ জ্বলন্ত চুলায় তেল ফুটিয়ে পুরি-মোগলাই ভাজছেন। ফলে ফুটপাতে হাঁটতে না পেরে মানুষকে নামতে হচ্ছে রাস্তায়। আবার রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাস, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করাতে থাকে। এতে প্রতিটি মোড়েই রাস্তা যায় সরু হয়ে, মোড় ঘোরার সময় গতি কমে যায় যানবাহনের। লেগে যায় যানজট।
একটি ঘটনা তুলে ধরা যাক, রাজধানীর মৌচাক সংলগ্ন সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল এবং দেশটিভির মাঝখানে (মূল সড়কের উত্তর দিকে) একটি শাখা রাস্তা ছিল একেবারেই নিরিবিলি। মূল সড়ক দখল করে কয়েক চা দোকান চালু থাকলেও এই রাস্তাটি ছিল একেবারেই ফাঁকা। কিন্তু দু’দিন ধরে সেই ফাঁকা রাস্তাটিও আর ফাঁকা নেই। সেখানে বসানো হয়েছে ফুসকা ও নুডুলসের দোকান। সেখানে ফুটপাত নয় রাস্তার ওপরই টুল-টেবিল দিয়ে এই দোকানেন কাস্টমারদের বসানো হয়েছে। কী নাটকীয় একটা ব্যাপার। রাস্তায় এমন হাজার হাজার দোকান কারা বাসায়? এখান থেকে কারা মাসোহারা গ্রহণ করেন? এমন প্রশ্ন প্রতিটি নাগরিকের।
মোড়ে দাঁড়ানো গাড়ি আর ফুটপাত দখলকে তাই ঢাকার রাস্তায় ভয়াবহ যানজটের প্রধান কারণ বলে মনে করছে ট্র্যাফিক পুলিশ। ট্র্যাফিক পুলিশের একটি কমন ঘোষণা থাকে, কোনো ব্যবসায়ীকেই ফুটপাতে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। মোড়ে মোড়ে গাড়িও দাঁড়িয়ে থাকতে দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটা ঘটে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটের সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং করা হয়। এতে সড়কের প্রশস্ততা কমে যায় এবং যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। আবার রমজানের শুরু থেকে ফুটপাতে ঈদবাজার ও ইফতারির বাজার বসানো হয়। ট্র্যাফিক বিভাগ এদের সবার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় না।
পরিসংখ্যান বলছে, এ শহরে হেঁটে সাঁইত্রিশ শতাংশ যাতায়াত হয়। কাগজে কলমে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও যাতায়াত ব্যবস্থায় পথচারীরা সবচেয়ে অবহেলিত। ঢাকার অনেক রাস্তায় ফুটপাত নেই। যেখানে আছে তার অধিকাংশই ভাঙাচোরা। যে সকল রাস্তায় প্রশস্ত ফুটপাত দেখা যায়, তাও চলে গেছে ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ফুটপাত ও সড়কে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন ভবনের সামনে অবাধে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। এর ফলে হাঁটার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এসব থেকে বাঁচতে হলে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
লেখক: হাসান আল বান্না, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক