দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েক মাস আগে সরকারের অনেক মাতামাতি শুনলেও মূলত তা ছিল ফাঁকা বুলি। তাই বলতে হয়, এই সরকারের উন্নতি ঘরে ঘরে মোমবাতি।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিদ্যুৎখাতের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের গল্প ছয় মাস আগেও শুনেছি। প্রয়োজন আমাদের ১১ হাজার মেগাওয়াট।
কিন্তু এখন ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতও নেই। এখন বিদ্যুৎ যায় না; বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে দেখা করতে আসে। বিদ্যুৎ বলে আমরা এখনও জীবিত আছি; মরিনি। এই হলো বিদ্যুতের অবস্থা।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কিছুদিন আগে বলেছিলাম এই সরকার জনগনের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে। বিদ্যুৎ নাই কিন্তু আমাদের টাকা গেল কই? বিদ্যুতের জন্য যত টাকা ঋণ করেছেন, সেই টাকা তো আমাকে অর্থাৎ জনগণকে পরিশোধ করতে হবে। কেন আমরা এই ঋণ পরিশোধ করব।
দ্রুত চাহিদা মেটানোর জন্য কাকে কাকে কুইক রেন্টাল প্রজেক্ট দিয়েছেন তাদের নাম মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফাইলবন্দী আছে। এই কোম্পানীগুলো কী পরিমান টাকা ঋণ নিয়েছে, কী পরিমান জ্বালানী ফুয়েল দেওয়া হয়েছে এবং কী পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে যে প্রতিবেদন সরকারকে দিয়েছে তার হিসাবটা দেন।
যে বিদ্যুৎ তারা দিয়েছে তার মূল্য কত, তাদের কাছে পাওনা কত? এই বিদ্যুতের নামে বিদ্রূপ করে জনগণের টাকা লুটপাট করেছেন, তার পরিমান দশ লাখ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
এই টাকা তো নতুন করে ছাপিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়নি। কোনো না কোনো প্রজেক্ট থেকে হাতিয়ে নিয়ে এই টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই টাকার হিসাব জনগণের নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, শুনতে পাচ্ছি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য সপ্তাহে তিন দিন স্কুল কলেজ বন্ধ রাখবে, জেনারেটর চলতে পারবে না, ডিজেটেল খুচরা বাজারে দেবেন না - তাহলে মানুষ কী করে বাঁচবে ? শিল্প কলকারখানা কীভাবে চলবে ? কৃষি, পোশাকখাতসহ সামগ্রীক উৎপাদনে কী পরিমান ঘাটতি হবে? সেই ঘাটতি পূরণ করে বিদেশী বাজার ধরে রাখা কঠিন হবে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে এক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন গয়েশ্বর। স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভার আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল।
স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ইয়াছিন আলী প্রমুখ।
তিনি বলেন, মিডনাইট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার বাড়ি ঘেরাও করতে গেলে চা দিয়ে আমন্ত্রণ করবেন। আপনার বাড়ি ঘেরাও করতে হলে যত লোক যাবে, সেই লোকের চা খাওয়ানোর মতো পানি মওজুত আছে ? নাই। আপনার চায়ের দাওয়াতে হয়ত যাবে না; যদি দেশের জনগণ গণভবন ঘেরাও করতে যান, জিনিসপত্র গুছিয়ে গাড়িতে তুলি দিয়ে আপনাকে বিদায় জানাতে যেতে পারে। হয়ত আপনি মনের অজান্তে কথাটা চা খাওয়ার কথাটা বলছেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে টুস করে পানিতে ফেলে দেওয়া এটা একান্তই হিউমার। অর্থাৎ শেখ হাসিনা ঠাট্টাও জানে। ঠাট্টা খালেদা জিয়ার সাথে করেন কিন্তু জাতির সামনে যে ঠাট্টা ১৪ বছর যাবৎ করছেন, এটার হিসাব জনগণ একদিন নিতেই পারে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, অর্থমন্ত্রী একজন আদমবেপারী। তিনি বলেন, আইএমএফের কাছে কোনো টাকা চাই না। আবার ভেতরে ভেতরে আইএমএফের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। আবার আইএমএফ বলছে, কোন প্রজেক্টে কত টাকা খরচ করেছে তার হিসাব চেয়েছে। যে ঋণ দিবে, তারা কী হিসাব নিবে না?
নির্বাচন কমিশনের প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই যে নির্বাচন কমিশন রয়েছে। সকালে এক কথা বিকালে এক কথা বলে। এত কথা বলেন কেন? কে নির্বাচনে আসবে, কে নির্বাচনে আসবে না এই কথা বলা আপনি কে?
আমারসংবাদ/টিএইচ