জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং এই ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ নেতারা ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
এ সময় তারা বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট দেশের সহযোগিতা কামনা করেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন ও ইতিহাসের সঠিক তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরতে কমিশন গঠনের কথাও বলেন।
শনিবার (২০ আগস্ট) ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে দলের আন্তর্জাতিক উপকমিটি আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় জাপান, রাশিয়া, জার্মানি, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের কাছে বিষয়টি তুলে ধারা হয়।
আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে দীর্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ বন্ধ রাখা হয়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির পর বিচার তো দূরের কথা মামলা পর্যন্ত করার সুযোগ ছিল না।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচারের পথ উন্মুক্ত করা হয়।
এ সময় সরকার চাইলে সামারি ট্রায়ালের মাধ্যমে ৩/৪ মাসের মধ্যে বিচার শেষ করা সম্ভব হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেটা চাননি। অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতো ওই বিচারও সাধারণ আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে।
আইনজীবী বলেন, কোনও ক্ষোভ বা প্রতিহিংসায় বশীভূত হয়ে সরকার বিচার করেনি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচারের জন্যই এটা করেছে। তবে কারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল এবং কারা তাদের মদত দিয়েছে— এটা জাতি জানতে চায়।
আমাদের জাতির জন্যও এই সত্য ঘটনা জানা দরকার। এজন্য আমরা কমিশন গঠন করতে চাই। ইতিহাসকে ইতিহাসের সঠিক জায়গায় স্থান করে দেওয়ার জন্য এটা গঠন করা হবে। যাতে মানুষ জানতে পারে প্রকৃতপক্ষে ওই সময় কী ঘটেছিল।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনি বৈধতা দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে দিয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতাসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার চাইতে পারেননি।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি নেতৃবৃন্দ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আপনাদের কাছে যান। আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যদি আপনাদের কাছে যায় তাহলে জিয়াউর রহমান কেন ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স পাস করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার থেকে রেহাই দিয়েছিল— সেই প্রশ্নটি করবেন।
তিনি বলেন, আজকে বিএনপি নিরীহ মানুষদের পেট্রোল বোমা মেরে মারছে, শত শত মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে— এটা কী মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? এই প্রশ্নগুলো বিএনপিকে করবেন এটা আপনাদের কাছে অনুরোধ রইলো।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসেডর এম জমিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, জাতীয় সংসদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য নাহিদ এজহার খান, বঙ্গবন্ধুহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বাদী আব্দুর রহমান শেখ রমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আমারসংবাদ/টিএইচ