বরিশালে বিএনপি’র গনসমাবেশের বাকি আর মাত্র দুই দিন। আর এই সমাবেশ উপলক্ষে বরিশাল জেলা ও মহানগর দলীয় কার্যালয়ের সামনে যেন ব্যানার, পোস্টার আর ফেস্টুনের উৎসব চলছে। ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর থেকে বরিশাল সমাবেশস্থল পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ, ভবনের দেয়াল আর ল্যাম্পপোস্টের লাগানো হচ্ছে ব্যানার। রঙ-বেরঙের এসব ফেস্টুন ব্যানারে শোভা পাচ্ছে দলের কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি দাবির কথা। এছাড়া গনসমাবেশের সফলতা কামনা করেও টানানো হয়েছে অসংখ্য পোস্টার হচ্ছে লিফলেট বিতরন।
বুধবার (২ নভেম্বর) নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে চলছে ব্যানার ও পোস্টার লাগানোর কাজ। বিএনপি’র চেয়্যারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু’র মুক্তি দাবি করে পোস্টার লাগাচ্ছে দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তবে নগরবাসী বলছে, নগরীতে এত বেশি পোস্টার-ব্যানার গত এক দশকে দেখা যায়নি। ব্যানার-পোস্টার, ফেস্টুন টাঙ্গাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
বরিশাল নগর শাখার সাবেক ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘নতুন উদ্যমে নগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং সমাবেশস্থলে ব্যানার টাঙ্গিয়েছি’।
বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমাদের বরিশাল বিভাগের সকল ইউনিটের নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন টাঙ্গিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চান, এটা তো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অংশ হয়ে উঠেছে।” “আসলে এই সমাবেশ দলের নেতা-কর্মীদের জন্য একটি উদযাপনের উপলক্ষ হয়ে উঠেছে।”
নগরীর এক পথচারী বলেন, আমরা শহরের রাজপথে বিএনপির ব্যানার-পোস্টার দেখছি এবং দেখে আমাদের কাছে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে মনে হয়েছে। “আমরা আশা করি আগামী দিনগুলো দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য শান্তিপূর্ণ হবে।”
এদিকে বিভাগীয় শহর বরিশাল নগরীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন যতোই এগিয়ে আসছে ততোই নগরীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি জেলা, উপজেলা, পৌর এলাকা ও ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল উত্যপ্ত হয়ে উঠেছে। যেমন নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশের ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলা চালানো হচ্ছে।
এদিকে আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যায় নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মিছিল ও সমাবেশ করার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী ৫ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাপে রাখতে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো হয়েছে। যেকারণে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা বরিশাল।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে একযোগে মিছিল ও সমাবেশ করার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাকর্মীদের চাঙা করার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। আমরাও যে মাঠে আছি, তা মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে জানান দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি তাদের সমাবেশ করবে, আমরা তাতে বাঁধা দেবোনা। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে আমার তাদের প্রতিরোধ করবো। যানবাহন ধর্মঘটকে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, হঠাৎ করে মিছিল, সমাবেশ ও হামলার ঘটনা বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ বাঁধাগ্রস্ত করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি চক্রান্ত। আওয়ামী লীগ কোনোভাবে আমাদের আটকাতে না পেরে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এমনকি পুলিশ দিয়ে বাসা-বাড়িতে তল্লাশীর নামে হয়রানী শুরু করেছে।
এসব করে কোনো লাভ হবেনা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ৫ নভেম্বরের গণসমাবেশ হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড়। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। পরিবহন ধর্মঘটকে কর্মীরা কোনো বাঁধাই মনে করছেন না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কোনো বাঁধাই বিএনপির নেতাকর্মীদের রুখতে পারবে না।
ইএফ