সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দীর্ঘ পাঁচ মাস থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন।
এসময় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ বলেছেন, আমার সুস্থতা ও স্বদেশে ফিরে আসার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানাই, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন ঠিক আছি কিন্ত আমার পায়ে কিছু সমস্যা আছে এবং ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমার সুস্থতা কামনায় দোয়া করার জন্য পার্টির নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। ব্যাংককে আমার চিকিৎসার সময় সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়ার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
রোববার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে দেশে ফিরে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও ধন্যবাদ জানাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সময় সহায়তা ও সহযোগিতার জন্য। আগেও বলেছি,আজও বলছি-আমি সব সময়ই জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই।আপনারা সবাই জানেন, আমার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ,আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।আমি দেখেছি গত ৩২ বছরে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
বিরোধীদলের এ নেতা বলেন, জাতীয় পার্টির জন্য যারা কষ্ট করেছেন,জেল খেটেছেন এবং জীবন উৎসর্গ করেছেন,তাদের সবার নিকট আমি কৃতজ্ঞ। আমি আবারো বলছি,পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই উঠে না। বরং আমি জাতীয় পার্টির সব সদস্যকে খোলা মনে আহ্বান জানিয়েছি-যারা জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু,জনাব নাজিউর রহমান মঞ্জু,জনাব কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে চলে গেছেন এবং নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন,তাদের ফিরে আসার জন্য। ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কঠিন ও প্রতিকুল সময়,যারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন-তাদের আমাদের অবশ্যই যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে।
রওশন এরশাদ বলেন, আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি,আমি পার্টির সব এমপি,প্রেসিডিয়াম এবং অন্যান্যদের সঙ্গে যেকোন বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে বসবো। আমি নিশ্চিত,সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারবো,ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, এসব ভুল বোঝাবুঝির জন্য এবং পার্টিকে দুর্বল করতে কিছু ষড়যন্ত্র হতে পারে;যেমনটি আমরা ১৯৯৬,২০০১ এবং ২০১৪ সালে দেখেছি। ইনশাআল্লাহ,আমরা সেই ষড়যন্ত্রগুলোকে নস্যাৎ করব এবং ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়ে তুলবো।
তিনি আরও বলেন, রংপুর সিটি করপোরেমন নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই। মনে রাখবেন, রংপুর জাতীয় পার্টি প্রাণ।এটা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি।তাই আসনটি যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে এবং জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙল’ নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হবে এমন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবো,ইনশাআল্লাহ।এজন্য সব নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখতে সর্ববাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন।দুর্নীতি,অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু ক্রটি রয়েছে।আমি নিশ্চিত যে,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অবগত আছেন এবং আমি তাঁকে অনুরোধ করব এই বিষয়গুলোকে আরো ঘনিষ্টভাবে সমাধান করতে এবং তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের আরো বেশি আন্তরিক ও সক্রিয় হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান ভূ-রাজনীতি বিশেষ করে ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে।এর প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও।তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে আরো সতর্ক হওয়া উচিত এবং সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।
রওশন এরশাদ বলেন, বিএনপির অধীনে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমাদের নেতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আমি ও আমার নাবালক সন্তানসহ দলের হাজার হাজর নেতাকর্মী জেল খেটেছিলেন। তখন আমাদের জনসভাও করতে দেয়া হয়নি।ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অনেক জনসভায় হামলা চালিয়ে কতশত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল।সেই অন্ধকার দিনগুলো আমরা ভুলবো কি করে?তাছাড়া আমরা তাদের শাসনামলে হাওয়া ভবনের দুর্নীতি,অব্যবস্থাপনা ও অপতৎপরতা দেখেছি।
তিনি বলেন, জনগণ উন্নতি ও শান্তি জন্য পরিবর্তন চায়,যা জাতীয় পার্টিই দিতে পারে সেই শান্তি।অবশ্যই তা বিএনপি নয়। বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না। রংপুরে আমাদের প্রিয় নেতা,সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্নেহধন্য এবং তাঁর পছন্দের যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই লাঙ্গলের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়া হবে। যাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে,তার নির্বাচন ও বিজয়ের মধ্যদিয়ে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দল হিসেবে নতুন করে প্রতিষ্ঠা পাবে, ইনশাল্লাহ।
বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে আসেন জাতীয় পার্টি ও বিরোধী দলীয় নেতার মূখপাত্র কাজী মামুনূর রশীদ, পল্লীবন্ধুপুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ ও রওশনপুত্রবুধু মাহিমা সাদ।
বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান এবিএম রুহল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, এসএমএম আলম, গোলাম মসীহ্, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাসরিন জাহান রত্না এমপি, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, মনিরুজ্জামান টিটু, নূরুল ইসলাম নূরু, মনোয়ারা তাহেরা মানু, আমেনা হাসান প্রমূখ।
এবি