বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অযাচিতভাবে প্রবেশ করে সিমেন্টের ব্যাগে করে হাত বোমা নিয়ে যায় এবং সেখানে রেখে আসে, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। এরপর দলীয় কার্যালয়ে তারা ন্যাক্কারজনকভাবে অভিযান চালিয়ে নিচ তলা থেকে ৬ তলা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে।
এমনকি বিএনপি চেয়ারপার্সনের কক্ষ, মহাসচিবের কক্ষ, অফিস কক্ষের দরজা তারা অন্যায়ভাবে ভেঙে প্রবেশ করে এবং সকল আসবাবপত্র, ফাইল, গুরুত্বপূর্ণ নথি, তছনছ করে। তারা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স এবং এমনি কি দলীয় সদস্যদের প্রদেয় মাসিক চাঁদার টাকা, ব্যাংকের চেক বই, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্তসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন বুধবার (৭ ডিসেম্বর) প্রতিদিনের ন্যায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সমবেত হয়। আকষ্মিকভাবে বেলা ২টা থেকে পুলিশ সমবেত নেতা-কর্মীদের ওপর হঠাৎ করেই বিনা উস্কানিতে অতর্কিতভাবে ক্র্যাকডাউন শুরু করে। তারা বর্বরোচিতভাবে নির্বিচারে মুহুর্মূহু গুলি, টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড, ককটেল, লাঠিচার্জ করতে থাকে। যা আপনাদের চোখের সামনেই ঘটেছে এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এই কাপুরষোচিত ও লোমহর্ষক ঘটনা স্বাধীন দেশে কল্পনাতিত।
তিনি আরো বলেন, পুলিশের গুলিতে পল্লবী থানার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মকবুল হোসেন নিহত হন এবং অসংখ্য নেতা-কর্মী ও পথচারী গুলিবিদ্ধ হন। যাদের সঠিক পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত নিরূপন করা যায় নাই। পুলিশের হামলায় অনেক সাংবাদিক বন্ধুও আহত হন। পুলিশ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনেও বাধা দেয় এবং তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় ও অশোভন আচরণ করে।
ফখরুল বলেন, পুলিশ নিজেদের রেখে আসা বোমা উদ্ধার ও বিষ্ফোরনের নামে নাটক সাজায় ও মিথ্যাচার করে। আমার সামনেই পুলিশ সেখানে অসংখ্য বোমা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শুধু পুলিশ নয়, পুলিশের সাথে ডিবি, সোয়াদ বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরাও এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে নিয়োজিত ছিল।
এই নেতা আরো বলেন, আওয়ামী বুধবার সমগ্র ঢাকা শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তাদের সশস্ত্র ও উশৃংখল কর্মীরা পাড়ায় মহল্লায় জঙ্গি মিছিল করে এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও তাদের পরিবার পরিজনের ওপর হামলা করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ওয়ারী থানার যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল মাহবুব মিজুকে বাসায় না পেয়ে তার বৃদ্ধ পিতা মিল্লাত হোসেনকে (৬৭) বেদমভাবে প্রহার করে যার ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
আমি সকালে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমার অফিসে যেতে চেয়েছিলাম। আপনাদের সামনেই পুলিশ বিজয়নগর মোড়ে আমার গাড়িকে আটকে দেয় এবং আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ দলীয় কার্যালয়সহ নয়াপল্টনের পুরো সড়ক অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
পুলিশ দাবি করছে বিএনপি কার্যালয়ে বিষ্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে। তারা তা উদ্ধারের তল্লাশী চালানোর জন্য ক্রাইম সিন ঘোষণা করে সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ আইন হচ্ছে- কোন বাড়িতে তল্লাশী চালাতে হলে সেই বাড়ির মালিককে সাথে রাখতে হবে এবং নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে।
সাধারণত এই ধরনের তল্লাশী চালাতে হলে সার্স ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হয়। এক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। উপরন্ত বুধবার আমাকে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দিয়ে বাইরে রেখে দীর্ঘ চার ঘণ্টা বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে ভাংচুর করে, বোমা রেখে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রয়েছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান ডাক্তার এ জেডএম জাহিদ হোসেন। বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন খান, জহির উদ্দিন স্বপন, তাইফুল ইসলাম টিপু।
টিএইচ