‘সংসদ ভেঙে ‌দিতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন নয়’

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২২, ০৪:৪৬ পিএম
‘সংসদ ভেঙে ‌দিতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন নয়’

বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য ও ঢাকা বিভাগ গণসমাবেশের প্রধান অতিথি ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে। ভোট হবে ব্যালটে। বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকের সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। এজন্য আমি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। এবং তার সাথে আল্লাহর  প্রংসাজ্ঞাপন করছি। আপনারা জানেন আজকে যিনি এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তাকে আটক করা হয়েছে গভীর রাতে। আপনারা প্রমাণ করেছেন নেতার জন্য নয় আপনারা দেশের জন্য রাজনীতি করেন। এই সমাবেশ বানচাল করার জন্য প্রশাসন ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আমাদের এক নেতা পুলিশের গুলিতে নিহত আরো শত শত আহত করেছে। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সকল সম্পদ পুলিশ নিয়ে গেছে। পুরো কার্যালয় তছনছ করে গেছে।

তিনি আরো বলেন, এই সরকার এখন জনতার ভয় ভীতু। এজন্য আমাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সভা সমাবেশ করার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেখানেও বাঁধা। কারন আমরা মানুষের ভোটের অধিকারের কথা বলছি। নিরাপত্তার কথা বলছি। আমরা জানি এই বাংলাদেশের মানুষ আর সরকারকে ভয় পায় না। মানুষ এখন শেখ হাসিনার বিদায় চায়। খিলগাঁও,যাত্রাবাড়ী মতিঝিল পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ছে। এতে মানুষ কি বার্তা দিচ্ছে। মানুষ এখন সরকারকে সরে যেতে বলছে। মানুষ আর হাসিনা সরকারকে আর দেখতে চাচ্ছে না। মানুষ এখন নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র নেতৃত্ব চাচ্ছে। এই সরকারকে এখন আর বিশ্বাস করে না আওয়ামী লীগকে।

মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক দিক থেকে খাদের কিনারায় পড়ে গেছে। দেশ থেকে ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে গেছে। তারা বিচার ব্যবস্থাকে  দলীয় করন করে ফেলেছে। যার কারণে বেগম জিয়া মুক্তি পায়নি। অন্যায়ভাবে তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছে। আজকের সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে।যার উধাহরন পুলিশ আমাদের পার্টি অফিসে যা করেছে।হাসিনার পক্ষে আর দেশ চালানো সম্ভব নয়। আজকে দেশের জনগন শুধু গরীব হ।২০ভাগ গরীব এখন ৪০ ভাগে গিয়েছে। এই সরকারের এখন বিধায় চায় মানুষ। এই সরকারকে এখনি পদত্যাগ করতে হবে।

দশ দফা উপস্থাপন করে তিনি বলেন, যারা যুগপৎ আন্দোলন করবে তাদের সাথেও আলোচনা করেছি। সংসদ ভেঙে দিতে হবে নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে। ভোট হবে ব্যালটে। বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আইসিটি মামলা বাতিল করতে হবে। বিদ্যুৎ জ্বালানি দাম কমাতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজার ক্রয় ক্ষণটার মধ্যে রাখতে হবে। শিশু শ্রম বন্ধ করতে হবে।দূর্নীতির বিচারে কমিশন গঠন করতে হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন রাখতে হবে।

বিএনপির ১০ দফা

১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ।

২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।

৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন। উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‍‍`লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড‍‍` নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল।

৪. খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলীয় সব নেতা-কর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি। দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা। সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করা।

৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী আইন বাতিল করা।

৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল।

৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।

৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন। দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া।

একই সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস সহ সকল নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তি দাবিতে আগামী ১৩ ডিসেম্বর সারাদেশে গণমিছিল ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আজকের সমাবেশে ঘোষণা করা ১০ দফা দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা সহ দেশের সকল মহানগর উপজেলায় গণ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।


ইএফ