ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্রপ্রার্থী।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে তারা তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারকারী প্রার্থীরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু।
জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটানিং অফিসার মো. শাহগীর আলম ৩ জন প্রার্থীর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে সর্বমোট ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ৮ জানুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থীদের হলফনামায় ত্রুটি ও ন্যূনতম এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসহ সমর্থনসূচক তালিকায় গরমিল থাকায় পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
উপনির্বাচনের অন্য প্রার্থীরা হলেন- বিএনপি থেকে সদ্য পদত্যাগকারী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ এবং জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী এবং জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল।
জানা যায়, শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রার্থীদের এক বৈঠকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করা হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে উপ-নির্বাচনের একবছর পরই সেখানে হওয়া পরবর্তী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে যেন প্রার্থীরা সিদ্ধান্ত মেনে নেন সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। মূলত উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সরে যাওয়া।
এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার কিংবা অন্য প্রার্থী জয়ী হলে সেক্ষেত্রে দলীয় কৌশল বাস্তবায়ন হবে, যেটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা।
এদিকে এ অবস্থায় আসনটিতে কপাল খুলতে যাচ্ছে পদত্যাগ-পরবর্তী বহিস্কার হওয়া বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক পাঁচবারের এমপি উকিল আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়ার।
তবে সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সাত্তারকে সরকার নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিন প্রার্থী অংশগ্রহন করায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তর সৃষ্টি হচ্ছিল। এ অবস্থায় দলীয় বিভক্তি রুখতে ওই তিনজনকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়। তারা তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীন সিদ্ধান্তে কোনো রকম চাপ ছাড়াই তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। দলীয় কোনো চাপ ছিল না।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু শুক্রবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জেলা নেতাদের সঙ্গে প্রার্থীদের আলোচনার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি স্বল্প সময়ের জন্য এই নির্বাচনে অংশগ্রহন করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন বলেন, অল্প সময়ের জন্য এমপি হয়ে যেহেতু মানুষের কাঙ্খিত উন্নয়ন করতে পারব না। তাই আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি।
আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলম সাজু জানান, অল্প সময়ের জন্য আমি উপ নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছিনা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে এ আসনটি শূন্য হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপনির্বাচন হবে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ এ আসনটিতে তাদের দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত ঘোষণা করে।
ভোটের আগে বেশ আলোচনায় আসেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা পাঁচবারের সংসদ সদস্য ৮৪ বছর বয়সি আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করে ক্ষোভে দল থেকে পদত্যাগ করেন।
তার নামে কেনা হয় মনোনয়নপত্র। এর পরপরই তাকে দল থেকে বহিস্কারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএনপি। সর্বশেষ জেলা বিএনপিসহ সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
প্রসঙ্গত, সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার দুই লাখ ৩৭ হাজার ১৫৩ জন। আশুগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ভোট সংখ্যা এক লাখ ৩২ হাজার ৯৭০টি।
এআরএস