বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের নামে দেশে যে সীমাহীন লুটপাট হয়েছে তার সকল দেনা সাধারণ মানুষের ঘাড়ে পড়েছে। চলতি বছর শুধুমাত্র ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে লাখ কোটি টাকার বেশী। উন্নয়নের চাপাবাজির নামে দেশকে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে।
বুধবার (১০ মে) দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লুটেরা দুর্নীতিবাজচক্র আয়েশী জীবন কাটালেও সাধারণ মানুষের এখন ‘নুন আন্তে পান্তা’ ফুরায়। সরকারের লোকজনের সীমাহীন দুর্নীতিতে দ্রব্যমূল্য, সার-বীজ, কীটনাশকসহ জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধিসহ তীব্র তাপদাহের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস চলছে। এই তীব্র দাবদাহে শহরে ৫/৬ ঘন্টা এবং গ্রামাঞ্চলে ১২/১৪ ঘন্টা লোডশেডিং চলছে। নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। ইতোমধ্যে দেড় বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। ডলারের বিনিময় হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকগুলো লুটপাট করে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক গিলে ফেলেছে ক্ষমতাসীন রাঘব-বোয়ালরা। প্রধানমন্ত্রী সারাক্ষণ বিএনপি’র বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে অর্থপাচার করলো কারা? অর্থপাচারকারীদের নাম প্রকাশিত হচ্ছে কেবলমাত্র ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এবং আওয়ামী নেতাদের। ঋণের নামে ব্যাংক খালি করলো কারা? বিপুল রিজার্ভের তথ্য দিয়ে জোরেসোরে ঢোল বাজালেন প্রধানমন্ত্রী, সেই রিজার্ভ এখন তলানীতে ঠেকলো কিভাবে ?
বিএনপি নেতা বলেন, দেশকে একটি পারিবারিক জমিদারিতে পরিণত করে ১৮ কোটি মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির প্রজা বানানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে নির্বিচার দলীয়করণ, মানবাধিকার হরণ, নানা কালাকানুনের মাধ্যমে কন্ঠের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের অপকর্মের সমালোচনা করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীসহ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী এখনও কারাগারে। কেবলমাত্র সরকারের সমালোচনা করার জন্য গত কয়েক মাসে প্রায় দুই শতাধিক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই সরকারের আমলে বৈষম্য, নিপীড়ণ ও বিদ্বেষের এক বিষাক্ত বৃত্তের মধ্যে দেশের জনগণকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। অবৈধ ক্ষমতার প্রতি অনুরাগের জন্য এদের বিবেচনা শক্তি এবং ন্যায়বিচার প্রণালী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নিজেদের অনাচার এবং অপশাসন আড়াল করতে বিএনপিবিদ্বেষের হাইপার-প্রচারণা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিথ্যাচারের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। এসময় রিজভী বলেন, ক্ষনে ক্ষনে তাদের বক্তব্য পরিবর্তন হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচন হবে না। দেশ-বিদেশের মানুষও তা মেনে নিবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা ফজরুল হক মিলন, মীর শরফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, আসাদুল করিম শাহীন, আব্দুল খালেক, আমনিুণল ইসলাম ,শেখ শামীম, তরিকুল আলম তেনজিং, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এআরএস