পরিকল্পনামন্ত্রী

সিন্ডিকেট বলে কোনো গোষ্ঠী নেই

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৩, ০৫:২৬ পিএম
সিন্ডিকেট বলে কোনো গোষ্ঠী নেই

সিন্ডিকেট বলে কোনো সংস্থা বা গোষ্ঠী নেই। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কৌশল আছে, যা প্রায়ই পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। 

শনিবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে কৃষিজ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছা নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের নবীণ অর্থনীতি, চঞ্চল অর্থনীতি।

প্রতিনিয়তই ভোক্তা বাড়ছে। পণ্যের যোগান সুনির্দিষ্ট কিন্তু চাহিদা ক্রমবর্ধমান, যার ফলে মাঝেমধ্যেই বাজার অস্থির ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। পণ্য পরিবহণে পথে পথে চাঁদাবাজি থাকলেও আগের চেয়ে কম। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রুত আমদানি করতে হবে।
চাহিদা মোতাবেক পণ্য আমদানিতে আমলাতান্ত্রিকতা করা যাবে না। ডিম আমদানির ঘোষণা এসেছিল বহু আগে। কিন্তু এখনো আমদানিকৃত ডিম বাজারে আসেনি। এক্ষেত্রে কৃষি, বাণিজ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

পুলিশি অভিযান বা জরিমানা করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সাময়িক মন্তব্য করে এম এ মান্নান বলেন, টিসিবিকে জীবিত রেখে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় পণ্য সরকারিভাবে মজুদ ও উৎপাদন বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আসছে জাতীয় নির্বাচনের সময়ে চা, চিনিসহ আরো কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ায় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। তবে তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির যৌথ আয়োজনে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। 

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দানাদার খাদ্য-শস্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ, মাংস, ডিম, আলু, আদা, রসুন, শাকসবজি ইত্যাদি উৎপাদনেও আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজেস্ব চাহিদা পূরণে সক্ষম। তারপরও বাজারে দেশীয় উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। ভোক্তা পর্যায়ে যে দামে কৃষিপণ্য বিক্রি করা হয় কৃষকরা তার তিন ভাগের এক ভাগ দামও পায় না। যে আলু কৃষকরা ১০ থেকে ১২ টাকায় কেজি প্রতি বিক্রি করেছে, সেই আলুই কৃষকদের এখন ৪০-৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই আমি ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকদের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি। ডিমের মতো আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে স্বল্পপরিসরে আলু আমদানি করা যেত।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান বলেন, ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রান্তিক খামারিদের কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের ফাঁদ থেকে বাঁচাতে হবে। তা না হলে ক্ষুদ্র, মাঝারি খামারিরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসবে। তাই খামারিদের বাঁচিয়ে ডিম, ব্রয়লার মুরগির ন্যায্য দাম নিশ্চিতে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। আলু, পেঁয়াজ, ডিম, মাংস যা দেশে উৎপাদন হচ্ছে এবং চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের সক্ষমতাও রয়েছে সেগুলোর দাম ভারত, পাকিস্তান থেকে কেন বেশি? কোন সিন্ডিকেট এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দেশে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্যের দাম বাড়ছে, তা খুঁজে বের করে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইসরায়ের-ফিলিস্তিন সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন টেনশন তৈরি করেছে। এতে আমাদের মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ারও শঙ্কা রয়েছে। তখন আমাদের বিদ্যুৎ খাতের ওপর প্রভাব পড়লে লোডশেডিং বাড়তে পারে। 

কৃষিজ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সাত দফা সুপারিশ করেন।

কৃষিজ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি খাতের সদিচ্ছা শীর্ষক ছায়া সংসদে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইডেন কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

আরএস