সরকার দেশে ‘ফেরাউনের রাজত্ব’ কায়েম করেছে বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ জড়িমাগ্রস্থ সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টায় শেখ হাসিনা আওয়ামী ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠার একটি ছক ও বিন্যাস ধরেই এগুচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলা মাত্রই রক্ত ঝরানো হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষদের। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠি এখন শেখ হাসিনার বুলেটের টার্গেট। মূলত দেশে গণতন্ত্র এখন মৃত্। বার বার গণতন্ত্রকে হত্যা করা আওয়ামী লীগের নিজস্ব শৈলী।”
‘‘ জনগনকে দমন করতে এজন্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ হাজার নেতা-কর্মীকে বন্দি করেছেন শেখ হাসিনা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহার ওমর বীরউত্তম, মোহাম্মদ শাহজাহান…সহ অসংখ্য অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি (শেখ হাসিনা) যে ফেরাউনের রাজত্ব কায়েম করেছেন… এটাই তার প্রমাণ, তার (সরকার) পতন হবেই।”
রিজভী বলেন, ‘‘ প্রধান নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের স্বার্থ রক্ষা না করে শেখ হাসিনার কাছেই আত্মসমর্পন করেছেন। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আজকে যে ধারাবাহিক আন্দোলন এবং এই আন্দোলন করতে গিয়ে অসংখ্য নেতা-কর্মীর যে আত্মদান, তাদের যে রক্তদান এটাকে উপেক্ষা করে কমিশন একতরফাভা্বে তফসিল ঘোষণা করেছে।
দেশের সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিদেশী কুটনীতিকদের আবেদন অগ্রাহ্য করে তিনি শুধুমাত্র একনায়ক, গণতন্ত্র বিরোধী ও ভোটারবিহীন সরকার প্রধানের কথা শুনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন।”
‘‘ উনি(সিইসি) যখন তফসিল ঘোষণা করলেন তখন ভোটের সময়টাও বলে দেয়া দরকার ছিলো যে, সেটা নিশিরাতে হবে না, দিনের বেলা হবে না ভোর বেলা হবে… এটা বলে দিতেন কখন হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘একতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করতে জনগন প্রাণ হাতে নিযে সংগ্রাম করছে। জনগনের ক্ষমতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন সকল স্বৈরাচারির জন্য হবে সর্তক বার্তা। দেড় দশক ধরে রাজনৈতিক সংকট এখন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”
‘‘ জনগনই বাংলাদেশের ত্রাণ কর্তা। বৈশ্বিক গণতন্ত্রের যুগে এই লড়াই শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, এই লড়াই পৃথিবীর সব গণতন্ত্রকামী সব মানুষের, এই লড়াই বাংলাদেশের মানুষের হারিয়ে যাওয়া অজস্র মৃত্যু, নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে কেড়ে নেয়া জনগনের ভোটাধিকার অর্জনের লড়াই।বিশ্ব বিবেক আজ জাগ্রত। বাংলাদেশের মানুষকে নিষ্ঠুর একনায়ক শেখ হাসিনার শোষন-অত্যাচারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামকে সমর্থন দিচ্ছে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ।”
‘আওয়ামী লীগকে শনির দশায় পেয়েছে’ রিজভী বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগকে এখন শনির দশায় পেয়েছে। জনসমর্থনে তাদের হাল শুণ্যের কোঠায়। ওরা শুধু ক্ষমতার নেশায় বুঁদ হয়ে শুরু করেছে রক্তাক্ত তান্ডব।বিএনপি নেতাকর্মীরা পাইকারিহারে গ্রেফতারের শিকার।তাদের ধরতে না পারলে গ্রেপ্তার হচ্ছেন বাবা, শ্বশুর, ছোট ভাই এমনকি বাড়ির মেয়েরা পর্যন্ত।”
‘‘যেহেতু আওয়ামী ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তরুণরা সামনের সারিতে সেহেতু তরুণদের ওপর চলছে মরণঘাতী সহিংসতা।সশস্ত্র আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বিরোধীদের বাসার গেট ভেঙে, তালা ভেঙ্গে ও জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকছে। তল্লাশির নামে পুলিশ গ্রামের পর গ্রাম বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ীর সকল ঘর তছনছ করে দিচ্ছে।
বাবার মৃত্যুতে জামিন মেলেনি কারাগারে আটক ছাত্রদল নেতার। ছাত্রদল নেতাকে না পেয়ে বাবাকে হত্যা করেছে আওয়ামী ক্যাডাররা।প্রতিদিনের চিত্র এটি। প্রতিদিনে আওয়ামী নিঃশংসতার ছবি ও সংবাদ সংবাদপত্রের পাতায় অনেক সেন্সরশীপ, অনেক চাপের পরেও প্রকাশিত হচ্ছে।”
বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের সদস্যরা ‘উস্কে’ দিচ্ছে বলে অভিযোগও করেন তিনি।
গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ৩৯৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মামলায় আসামী করা হয়েছে ১ হাজার ৬৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে।
এইচআর