সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান

মন্ত্রী থাকাকালীন ১ টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে এমপি পদ ছেড়ে দেব

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৪, ০৬:১০ পিএম
মন্ত্রী থাকাকালীন ১ টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে এমপি পদ ছেড়ে দেব

‘মন্ত্রী থাকা অবস্থায় কেউ যদি এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে, তাহলে সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেব। মন্ত্রী হিসেবে সরকারি গাড়ি–বাড়ি ব্যবহার করি নাই। সেগুলো সব দান করে দিয়েছি। যেহেতু আমার লোন আছে, চাইলেই আমরা বিদেশ থেকে সব করতে পারি না। কিছু না করেও দুর্নামের ভাগীদার হয়েছি। ব্লুমবার্গ বাধ্য হয়েছে আমাদের সকল ব্যবসার বিস্তারিত তুলে ধরতে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া হলেও ৫০ বছরের ওপরে আমরা বড় ব্যবসায়ী, এটা বারবার প্রমাণিত। যে লোন আছে বিদেশের ব্যাংকে, সেটা কেউ দেখলো না। বাংলাদেশের মানুষের গর্বিত হওয়া উচিত। ইউকে–আমেরিকার বাইরেও অনেক দেশে ব্যবসা আছে। যেখানে বেচাকেনার সুযোগ পাই সেখানেই বিক্রি করি কিনি।’

শনিবার (২ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদের এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এসময় তিনি দাবি করেন, হলফনামায় কোথাও বিদেশি সম্পদের বিষয়ে বলা নেই। সেজন্য বিদেশি সম্পদ হলফনামায় দেখানো হয়নি।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা আছে, জবাবদিহিতা আছে। ব্যবসা ও রাজনীতি কেউ মিলিয়ে ফেলবেন না। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি, পারিবারিকভাবে আমরা ব্যবসায়ী। বেশ কিছু কথা আসছে, হলফনামায় তথ্য লুকানোর কথা। ট্যাক্স রিটার্ন অনুযায়ী হলফনামা দিতে হয়, আমরাও সেভাবেই দিয়েছি।

যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টির বেশি সম্পত্তি নিয়ে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশেষ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশি এই রাজনীতিবিদের বিশাল সাম্রাজ্যের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে।

ব্লুমবার্গের ওই প্রতিবেদনের বিষয়টি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়েও উঠে আসে। সেখানে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের সম্পর্কে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, আমেরিকা সে বিষয়ে অবগত। গত ২০ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

এ নিয়ে এবার সাবেক ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ–বিদেশে আমাকে নিয়ে খবর হয়েছে, অনেকে জানতে চেয়েছিলেন কেন এতদিন নিরব ছিলাম। দেশের বাইরে থাকায় একটু দেরিতে সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে।’

সাইফুজ্জামান বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ে অনেক কাজ করেছি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব, গেল সংসদের সেরা মন্ত্রণালয় ছিল ভূমি মন্ত্রণালয়। এখানে অনেকে বলেন দুর্নীতির কথা। খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে এত কাজ করতাম না।’

ছোটবেলা থেকেই লন্ডন আমেরিকায় বাড়িঘর ছিল উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নিই নাই, তাই তাদের অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের চেয়ে ব্যবসায়ী ক্যারিয়ার আমার বেশি। বাংলাদেশ থেকে টাকা না নিয়েও বাইরে ব্যবসা করা যায়। যদি অতীতে বিদেশে ব্যবসায় ভালো অবস্থান থাকে, সেখান থেকেও লোন পাওয়া যায়। সুনামের জন্য দেয়। যে নিউজ ব্লুমবার্গ করেছে, সেটায় হেডলাইন আর বডিতে মিল নাই।’

টিআইবি নির্বাচনের সাতদিন আগে রিপোর্ট দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে দাবি করে সাইফুজ্জামান বলেন, ‘অনেকে বলেছে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় আমি সুবিধা নিয়েছি। করোনায় অনেকের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি অনেকে আবার লাভবানও হয়েছে, ব্যবসা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হলে আমি খুশি হবো। আমি যদি কোনো দুর্নীতি বা আমি কি করেছি না করেছি সেটি বেরিয়ে আসবে।’

এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে বিদেশে ব্যবসা করি আর রাজনীতিতে এসেছি ২০১৩ সালে। সেই ধারাবাহিকতায় সেখানে সম্পদ বেড়েছে। টিআইবি বা লন্ডনের যেকোনো সংস্থা তদন্ত করতে চাইলে সহায়তা করব। আগে থেকেই এসেট ছিল, বাবার সম্পদ পেয়েছি। হলফনামায় যদি বিদেশের সম্পত্তির হিসেব না চায়, আমি আগ বাড়িয়ে কেনো বলতে যাব?’

প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এবারের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি।

আরএস