ছাত্র আন্দোলনে শহীদ তিন পরিবারের সঙ্গে জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৪, ০৯:২৫ পিএম
ছাত্র আন্দোলনে শহীদ তিন পরিবারের সঙ্গে জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির বলেছেন, আমরা তাদেরকে (শহীদ পরিবার) সান্ত্বনা দিতে এসেছি। আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকবো, তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হবো ইনশাআল্লাহ। এই শহীদ পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে আমরা একটি সুন্দর ও নতুন বাংলাদেশ গড়বো।

বলেন, বৈষম্যরিবোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংলাদেশি। বাংলাদেশের মানুষ এই শহীদের আত্মত্যাগ যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে। গত ১৬ বছর দেশের মানুষ অনেক জুলুমের শিকার হয়েছে। তাই এই জুলুম অবসানের জন্য ছাত্ররা রাস্তায় নামে এবং পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিতভাবে গুলি করে শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে। ছাত্র-জনতার উপরে ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বর গণহত্যা চালায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।

তিনি বলেন, যেসমস্ত ছাত্র-জনতা বৈষম্য থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য যে প্রত্যাশা নিয়ে শহীদ হয়েছে এবং স্বৈরাচার হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। সে আলোকে এদেশের ১৮ কোটি মানুষের যে প্রত্যাশা, আমাদের দল জামায়াতেরও একই প্রত্যাশা। তা হচ্ছে বৈষম্যমুক্ত সুন্দর নতুন বাংলাদেশ গড়া। দেশে ইনসাফ কায়েম করা, বেইনসাফি দূর করা, বৈষম্য দূর করা এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার সুনিশ্চিত করা।

রোববার সকালে পশ্চিম সানারপাড়া ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুর্তজা আলী স্কুলের ছাত্র শহীদ মাহমুদুল হাসান জয়ের বাসায় জামায়াত নেতৃবৃন্দ তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন।

শহীদ মাহমুদুল হাসান জয়ের বাসায় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আরও দুই শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তারা হলেন, কুতুবখালী মাদরাসার ছাত্র শহীদ জিহাদ হোসেনের বাবা মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। ব্র্যাক স্কুলের ছাত্র শহীদ শাহাদাত হোসেন শাওনের বাবা বাসির আলম।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসেন খান, ডেমরা উত্তর জামায়াতের আমির মাওলানা মিজানুর রহমান, ডেমরা পূর্ব জামায়াতের আমির মোজাফফর হোসেন, ডেমরা দক্ষিণ জামায়াতের আমির মির্জা হেলাল উদ্দিন, ডেমরা মধ্য জামায়াতের আমির মুহাম্মদ আলী, যাত্রাবাড়ী পূর্ব থানা আমির শাজাহান খান প্রমুখ।

এ সময় জামায়াত নেতৃবৃন্দ শহীদ পরিবারকে সান্ত্বনা দেন, ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দেন এবং শহীদের প্রতি পরিবারকে ১ লাখ করে মোট ৩ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা করেন।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সাহস থাকলে দেশে এসে রাজনীতি করেন। দেশের মানুষের ভালোবাসা দিয়ে রাজনীতি করতে হয়, লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করে রাজনীতি করা যায় না।

তিনি বলেন, মানুষের উপরে গণহত্যা চালিয়ে রাজনীতি করা যায় না, মানুষের উপরে জুলুম করে রাজনীতি করা যায় না। জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা মন্দির পাহারা দিচ্ছে। সব সময় আমরা হিন্দুদের পাশে থাকবো। হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ আমাদের নিকট পবিত্র আমানত; আমরা জীবন দিয়ে হলেও তাদের রক্ষা করবো।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের চোখের সামনে আমাদের ছাত্র ভাইদের নির্বিচারে গুলি করে শহীদ করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী ও পুলিশ। অনেক রক্ত ও শহীদের বিনিময়ে আমরা নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করি। আমাদের নতুন করে এই অর্জন করা স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে, তাদের মা-বাবা এদেশের গর্বিত মা-বাবা। জালিম স্বৈরাচার পতনের মধ্যদিয়ে আমরা এখন দেশে সুশাসন ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আমরা আপনাদের (শহীদ পরিবারের) খোঁজ খবর রাখবো। আপনারা আমাদের পরিবারের সদস্য।

অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক সেনাবাহিনী ধৈর্য ধরেছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ছদ্মনাম নিয়ে হিন্দুদের উপরে হামলা চালানো হচ্ছে। আওয়ামী হানাদার সন্ত্রাসীদের ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। এদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয় সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আপনারা কোনো তথ্য পেলে সেনাবাহিনী ও জামায়াতের ভাইদের খবর দিবেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে আপনারা সহযোগিতা করবেন, যাতে দেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়।

অধ্যাপক মোকাররম হোসেন খান বলেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সাম্প্রদায়িক হামলার মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা দেশ প্রেমিক জনগণকে সাথে নিয়ে আওয়ামী হানাদারদের সব চক্রান্ত বন্ধ করে দিব। 

নেতৃবৃন্দ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টা সহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার এবং সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত নস্যাৎ করে আমরা এগিয়ে যাব ইনশাল্লাহ। আওয়ামী লীগ পাকিস্তানি হানাদারের মতো দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। লুটপাট করেছে। বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে গণহত্যা চালিয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী হানাদাররা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়েছে। আওয়ামী লীগ ছিল রক্তচোষা জোক। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি ছিল সীমাহীন, এদেশের মানুষ ছিল তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ।


ইএইচ