সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন: ছাত্রশিবির

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪, ০৭:১১ পিএম
সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন: ছাত্রশিবির

আজ ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা UNESCO-র ১৪তম সাধারণ সম্মেলনে ৮ সেপ্টেম্বরকে ‍‍`আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস‍‍` হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এরপর থেকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো প্রতিবছর এই দিনে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপন করে আসছে। ব্যক্তি, সম্প্রদায় এবং সমাজের কাছে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়।

এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতি নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘গত বছর পরিচালিত আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ৷ নানা বৈষম্য ও দারিদ্র্যের কারণে সর্বজনীন শিক্ষার যে লক্ষ্য, তা এখনো সুদূরপরাহত। ২০২৩ সালে প্রকাশিত প্রায়োগিক সাক্ষরতা নিরূপণ জরিপে দেখা গেছে, ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সের ২৭.০৩ শতাংশ শিশু এখনো কোনো ধরনের প্রায়োগিক শিক্ষা পায়নি, যদিও দেশে ১৯৯৩ সাল থেকে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক৷

এই জরিপে দেখা যাচ্ছে—পড়তে, লিখতে, বুঝতে ও গণনা করতে পারেন, এমন প্রায়োগিক সাক্ষরতাসম্পন্ন মানুষের হার মাত্র ৬২.৯২%৷ দেশে সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নয় এমন মানুষ ২৬.০৫%, আংশিক সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ ১১.০৩ শতাংশ, প্রাথমিক পর্যায়ের সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ ১৯.৩০% আর উন্নত পর্যায়ের সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ ৪৩.৬২ শতাংশ৷”

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (PEDP), সাক্ষরতা অভিযান, অবৈতনিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা এবং কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার প্রসারে সরকার বিভিন্ন সময়ে নানামুখী কর্মসূচি ঘোষণা করলেও বাস্তব প্রয়োগে ঘাটতি থাকায় সাক্ষরতার হারে কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি সম্ভব হয়নি। দুর্নীতি ও সঠিক পরিচালনার অভাবে সাক্ষরতা বৃদ্ধির কার্যক্রম ফলপ্রসূভাবে বাস্তবায়নও হচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আমাদের জন্য একটি অনুস্মারক যে, আমাদের এখনো অনেক দূর যেতে হবে।

নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানান, আমাদের একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে হবে। দারিদ্র্য ও শিশুশ্রমের কারণে কোনো শিক্ষার্থী যাতে ঝরে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্য দূর করে গ্রাম ও শহরের শিক্ষার মানের সমতা নিশ্চিত করতে হবে। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিতকরণ, নৈতিক ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা-গবেষণার প্রসার এবং প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ২০% নিশ্চিত করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণাখাতের বাজেট আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষা নিয়ে যেসব সামাজিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠন কাজ করে তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ পরিশেষে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য শুধু সরকার নয়, বরং আমাদের প্রত্যেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন সম্ভব। আমরা এই লক্ষ্য অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাব এবং শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাব। আসুন আমরা সবাই মিলে অশিক্ষা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণের প্রচেষ্টায় অবদান রাখি, সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করি এবং শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনের মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

ইএইচ