অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করতে পারলে শহিদদের রক্তের মূল্যায়ন হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম
সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করতে পারলে শহিদদের রক্তের মূল্যায়ন হবে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করতে পারলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শহীদদের রক্তের মূল্যায়ন হবে।

শুক্রবার ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত মজলিসে শুরার সাধারণ অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বলেন, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। অতীতে যারাই যখন ক্ষমতায় এসেছে এবং ক্ষমতায় ছিল তারাই দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। কেউ কেউ বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর ২ জন মন্ত্রী ৩টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছে। তারা এক পয়সা দুর্নীতি করেছে বলে আজ পর্যন্ত কেউ অভিযোগও করতে পারেনি। এমনকি যতজন এমপি দায়িত্ব পালন করেছে তাদের বিরুদ্ধেও কেউ দুর্নীতির অভিযোগ করতে পারেনি। কারণ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা এক আল্লাহকে ভয় করে। রাষ্ট্রীয় সম্পদকে জনগণের সম্পদ মনে করে এবং বিশ্বাস করে। সেজন্য জামায়াতের কর্মীরা জনগণের সম্পদ লুট করে না এবং করবে না।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় শুক্রবার রাজধানীর মগবাজারস্থ আল ফালাহ মিলনায়তনে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

অধিবেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।

প্রধান অতিথি আরও বলেন, দেশ পরিচালনার দায়িত্ব জনগণ জামায়াতে ইসলামীর হাতে দিলে, যাকাত ভিত্তিক অর্থনীতি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

সুদ কখনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না মন্তব্য করে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, যাকাত ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম কর্মসূচি।

অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান,  মো. শামসুর রহমান অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, ড. মোবারক হোসাইন সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরী দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭১ সালে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছে। তবে দেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার স্বপ্ন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। অতীতের কোনো সরকার গণতন্ত্রের চর্চা করেনি। বরং ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। গত ১৫ বছর স্বৈরাচার সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ না করলেও দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে গণতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করতে দেয়নি। গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে রাস্তায় দাঁড়াতেও দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ নির্যাতনের মাত্রা যত বেশি বাড়িয়েছে, জনগণ আন্দোলনের মাত্রা তত তীব্র করেছে। আওয়ামী লীগ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে চায়নি এবং প্রকাশ করতেও দেয়নি। পরবর্তীতে রাষ্ট্রের কাছে ছাত্ররা মৌলিক অধিকার চাইলে, খুনি হাসিনার নির্দেশে তার পুলিশ বাহিনী ও সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ গুলি করে হাজার-হাজার ছাত্রকে হত্যা করে। এতে ছাত্রদের ডাকে আন্দোলনে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলনে শেখ হাসিনা দাম্ভিকতা জনগণ মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা শুধু ক্ষমতাই ছাড়তে বাধ্য হয়নি বরং দেশ ছেড়েও পালিয়েছে।

এমনকি তার দলের নেতাকর্মীরাও পালিয়ে গেছে। কেন পালাতে হয়েছে?- কারণ আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছে বলে জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে। বাস্তবে তারা দেশকে ধ্বংসের সড়কে তুলে দিয়েছে। যে কোন সময় দেশ দেউলিয়া হয়ে যেতো। আল্লাহর অশেষ দয়ায় দেশের জনগণ সেটি বুঝতে পেরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করেছে।

আগামীর বাংলাদেশ হবে জনগণের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেজন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই।

সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ন্যায় বিচার, আইনের শাসন এবং মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামী যে সংগ্রাম চালিয়ে আসছে তা চূড়ান্তরূপ নেওয়া পর্যন্ত সকল স্তরের নেতাকর্মীদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল এখনো অপপ্রচার চালাচ্ছে, অতীতের মত জামায়াতে ইসলামী দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে সকল অপপ্রচার রুখে দিতে প্রস্তুত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে, ইনসাফ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জামায়াতে ইসলামী অব্যাহত রেখেছে। বিজয় নিশ্চিত করা পর্যন্ত তিনি জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত রাখতে উপস্থিত মজলিসে শূরা সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।

ইএইচ